প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২২
ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে আত্মিক ও দৈহিক শুদ্ধির মাস মাহে রমজান। তবে রোজা বা ফাস্টিং-এর কেবল ধর্মীয় গুরুত্ব আছে, তা নয়। আর এটি যে কেবল মুসলমানদের জন্যেই কল্যাণকর তা-ও না।
আসলে রোজা, উপবাস, ফাস্টিং- যে নামেই অভিহিত করা হোক, এর রয়েছে অসামান্য শারীরিক উপকারিতা। দেহে সঞ্চিত টক্সিন ও ক্ষতিকর পদার্থ ধুয়ে মুছে সাফ হয় এবং ফলশ্রুতিতে শরীর সতেজ ও চাঙা হয়ে ওঠে যখন আমরা ফাস্টিং করি। শরীর আবর্জনা-জঞ্জালমুক্ত হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় অটোফেজি। এই বিষয়ে গবেষণা করে ২০১৬ সালে নোবেল পান জাপানী গবেষক ইশিনোরি ওসুমি।
ফাস্টিং কেন ও কীভাবে করবেন- এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য জানা যাবে এই ভিডিও থেকে।
আমাদের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, আল্লাহ ভগবান ঈশ্বর যে নামেই তাকে ডাকি না কেন, তিনি আছেন।
এই দেহটা তাঁর তরফ থেকেই উপহার।
এবং তিনি সবচেয়ে ভালো জানেন যে, এই দেহটা কী করে সুস্থ থাকবে!
He knows better than anybody.
কারণ তিনিই এটি সৃষ্টি করেছেন।
অথচ আমরা এক অদ্ভুত নেতিবাচকভাবে অনুপ্রাণিত যে, সুস্থতার জন্যে আমরা শুধু খুঁজি কী খেতে হবে!
কখনো কি কাউকে খুঁজতে দেখেছেন, কী না খেলে ভালো থাকব?
আমরা খুঁজি কী খেলে ভুঁড়ি মোটা হবে এবং তারপরে ভালো থাকব।
আসলে কি তাই?
সুস্থতার জন্যে কি শুধু খেতেই হবে?
আসলে সুস্থতার জন্যে মাঝে মাঝে না খাওয়া, কখনো কখনো খাওয়ার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি দেখেন, পৃথিবীতে যত প্রধান ধর্ম আছে সনাতন, হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, ইহুদি ধর্ম, খ্রিষ্টান ধর্ম, ইসলাম ধর্ম- প্রত্যেকটা ধর্মে ফাস্টিং এর প্রচলন আছে।
কোত্থেকে আসলো? সেই ধর্মের প্রবক্তাদের কাছ থেকে আসছে।
ইসলাম ধর্মের কথাই ধরেন। ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্যে প্রধান ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে পবিত্র কোরআন।
এবং পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার (১৮৩-৮৪) আয়াতে আল্লাহ বলছেন,
"হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বসূরীদের ওপর যাতে তোমরা আল্লাহ সচেতন থাকতে পারো। তবে রোজা রাখা তোমাদের জন্যে সবচেয়ে বেশি কল্যাণের যদি তোমরা জানতে।"
অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা বলছেন যে, রোজা রাখা তোমাদের জন্যে বেশি কল্যাণের যদি তোমরা জানতে।
রোজা ফরজ শুধু কি বেহেশতের জন্যে?
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) একটি হাদীসে বলেছেন, ‘তোমরা রোজা রাখো যেন তোমরা সুস্থ থাকতে পারো’। [আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত]
আরেকটি হাদীসে তিনি বলছেন, ‘সবকিছুর জন্যেই যাকাত বা শুদ্ধি প্রক্রিয়া রয়েছে। শরীরের যাকাত হচ্ছে রোজা’।
বিজ্ঞান কী বলছে?
সম্প্রতি যে একটি বিষয় নিয়ে বিজ্ঞান ব্যাপক গবেষণা করছে এবং এটা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা হচ্ছে ফাস্টিং।
এবং আমেরিকার বিখ্যাত জার্নাল, The New England Journal of Medicine এর একটা রিভিউ আর্টিকেল ২০১৯ এর ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়।
এই আর্টিকেলের টাইটেল ছিল - Effects of Intermediate Fasting on Health, Aging and Disease.
বিজ্ঞানীরা বলছেন, যখন আমরা খাবার খাই তখন দেহটাকে পরিচালনার জন্যে ফুয়েল দরকার।
যেমন একটা গাড়ি, চলার জন্যে তার ফুয়েল দরকার। হয় তার অক্টেন লাগবে নতুবা পেট্রোল লাগবে, অথবা ডিজেল লাগবে- সেরকম আমাদের এই দেহরূপী বাহনের জন্যে রেগুলার ফুয়েল লাগে।
এবং এই ফুয়েল মূলত আসে দুটো সোর্স থেকে-
একটা হচ্ছে, গ্লুকোজ। আরেকটা হচ্ছে, ফ্যাটি এসিড।
গ্লুকোজ আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে। আর ফ্যাটি এসিড থেকে আসে- ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার থেকে।
আপনি দুটোই খেলেন, রুটিও খেলেন, চিনিও খেলেন, সাথে গরুর মাংস দিয়ে ভাতও খেলেন। আপনার শরীরে গ্লুকোজও ঢুকল, আল্টিমেট ফ্যাটি এসিডও ঢুকল।
শরীর এই গ্লুকোজকে ব্যবহার করে মূলত তার প্রাথমিক ফুয়েল হিসেবে।
এবং এই ফ্যাটি এসিডকে জমিয়ে রাখে শরীরে ভবিষ্যতের জন্যে।
কোনো কারণে যদি এই গ্লুকোজের ঘাটতি হয়, তখন শরীর এই ফ্যাটি এসিড জমা আছে ফ্যাট হিসেবে, এই ফ্যাটে তখন হাত দেয়।
এবং ফ্যাটকে ভেঙে ফ্যাটি এসিড তৈরি করে এবং এই ফ্যাটি এসিডকে রূপান্তরিত করে নতুন একটি পদার্থে- তার নাম হচ্ছে কিটন বডি। এবং এই কিটন বডি তখন শরীরের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এখন এই কিটন বডি কখন তৈরি হয়? যখন বাইরে থেকে আপনার গ্লুকোজ অর্থাৎ শর্করা জাতীয় খাবার আপনি বন্ধ রাখলেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, যখন কেউ ফাস্টিং থাকে, তখন তার শরীরে দুটো মৌলিক পরিবর্তন সাধিত হয়।
সেই পরিবর্তনটা কী?
যেহেতু শরীর রেগুলারলি গ্লুকোজ থেকে শক্তি নেয়, গ্লুকোজকে ফুয়েল হিসেবে ব্যবহার করে। যেহেতু ফাস্টিংয়ে গ্লুকোজের সাপ্লাই বাহির থেকে বন্ধ, শরীর তখন ফ্যাট ভেঙে প্রথমে ফ্যাটি এসিড তৈরি করে।
এবং ফ্যাটি এসিডকেই পরবর্তীতে কিটোন বডিতে রূপান্তরিত করে এবং তাকে এনার্জি হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। এটাকে বলা হচ্ছে মেটাবলিক সুইচিং।
এবং আল্টিমেট তার মেটাবলিক সুইচিং ঘটছে এই ফাস্টিংয়ে।
দ্বিতীয় পরিবর্তন হলো- যেহেতু ফ্যাট ভেঙে এটি ঘটছে তাই ওজন কমতে শুরু করবে।
এবং খুব ইম্পর্ট্যান্ট হচ্ছে মেটাবলিক সুইচিং।
ডায়াবেটিস- এটা একটা মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। যখন আপনি ফাস্টিং থাকবেন, আপনার ভেতরের মেটাবলিজমের যে ডিজঅর্ডার, এটা একটু একটু করে ঘুরতে শুরু করবে।
এবং ব্যাপক গবেষণার ফলাফল হলো- ফাস্টিংকে এখন বলা হচ্ছে অটোফেজি।
অটো মানে নিজ, সেলফ। আর ফেজি বা ফেগি মানে হচ্ছে- খাওয়া।
নিজের জিনিস নিজে খাওয়া।
কীরকম?
আমাদের শরীর এক অদ্ভুত যন্ত্র।
পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল সবচেয়ে sophisticated যন্ত্র হচ্ছে আমাদের মানবদেহ।
এবং আমাদের দেহে ১০০ ট্রিলিয়ন সেল বা কোষ আছে। এই প্রত্যেকটা সেলে প্রতিদিন লক্ষাধিক রি-একশনের ফলে হরমোন, এনজাইম তৈরি হচ্ছে।
এবং এগুলো তৈরি হতে যেয়ে প্রত্যেকটা সেলের ভেতরে কিছু বর্জ্য পদার্থ যেমন টক্সিন, বিষাণু, ফ্রি রেডিকেল তৈরি হচ্ছে। এগুলো যদি সেলের ভেতর জমা থেকে যায় আমাদের শরীরের জন্যে এটা হার্মফুল।
এবং সেজন্যে সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেকটা সেলের ভেতরে একটা অটোমেটিক ক্লিনিং সিস্টেম করেছেন, যে সেল নিজেই বর্জ পদার্থকে খেয়ে ফেলবে।
এবং এই খেয়ে ফেলাটাকে বলা হচ্ছে অটোফেজি।
২০১৬ সালে জাপানি সেল বায়োলজিস্ট ডক্টর ইউসোনরি ওসুমি তিনি অটোফেজির ওপর গবেষণা করে নোবেল প্রাইজ পান।
এবং তিনি বলছেন যে, আপনি যদি সত্যি সত্যি সুস্থ থাকতে চান, তাহলে আপনাকে অটোফেজি করতে হবে। ফাস্টিংয়ে থাকতে হবে।
যত বেশি আপনি অটোফেজি করবেন, তত আপনার শরীরের ভেতরের যে দূষিত পদার্থ, বিষাণু, টক্সিন, ফ্রি রেডিকেলগুলো তত দ্রুত শরীর থেকে বেড়িয়ে যাবে। একদম ডিজল্ভ হয়ে যাবে।
এবং তিনি আরও বলছেন যে, একজন ব্যক্তি যখন কমপক্ষে ১২ ঘন্টা ফাস্টিং করবে, তখন তার অটোফেজি প্রক্রিয়াটা দারুণ কার্যকরী হবে।
নবীজী (স) বলেছেন, তোমরা রোজা রাখো যদি তোমরা সুস্থ থাকতে চাও।
বিজ্ঞান বলছে, আপনি যদি মাঝে মাঝে ফাস্টিং থাকেন তাহলে আপনার শরীরের বর্জ পদার্থগুলো সহজেই বেড়িয়ে যেতে সামর্থ্য হবে।
আপনি দেখেন, পৃথিবীতে যত দীর্ঘজীবী মানুষ যেমন বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী কত বছর বেঁচে ছিলেন? ১৬০ বছর।
আপনি তার জীবনী পড়ে দেখেন, কী খেতেন আর কী করতেন।
হযরত শাহজালাল (রহ), তার জীবনী পড়ে দেখেন।
তিনি কী করতেন? তিনি হুজরাতে থাকতেন। দিনে একবার বা কখনো কখনো দুইবার বেরিয়ে এসে খেতেন।
সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কেউ যদি সপ্তাহে তিন দিন ২৪ ঘন্টার ফাস্টিং করে তবে ইনসুলিন রেসিসটেন্স রিভার্স করে ডায়াবেটিস নিরাময় করতে সক্ষম হবে।
এবং টাইপ-টু ডায়াবেটিসের মূল কারণ হচ্ছে ইনসুলিন রেসিসটেন্স। এবং এই ইনসুলিন রেসিসটেন্স হওয়ার ফলে শর্করা জাতীয় খাবার গ্লুকোজ মেটাবলিজম করতে পারছে না। কাজে লাগাতে পারছে না। এটাকে রিভার্স করার জন্যে বলা হচ্ছে যে এই ফাস্টিং দারুণ কার্যকরী।
আজকের বিশ্বে ২০০ কোটি মানুষ ভুল খাবার খাচ্ছে তাও আবার অতিরিক্ত। ফলাফল মহামারির মতো স্থূলতা, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস।
দেখেন, এই যে বেইলি রোড, এই যে খিলগাঁয়ের দোকানগুলো ফুলে ফেঁপে উঠছে, বিকেলে গেলে আপনি জায়গা পাবেন না। সন্ধ্যার পর সেই রকম ভিড়।
আমরা যখন স্টুডেন্ট ছিলাম, আমাদের বলাই হতো যে, এই টাইপ টু ডায়াবেটিস হৃদরোগ এগুলো ৪০ এর পরে হয়।
জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার আব্দুল মালিক স্যার আমাদের একটা সেমিনারে আসছিলেন। তিনিই বললেন যে, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে কম বয়সী হৃদরোগীর বয়স হচ্ছে মাত্র ১৩ বছর’।
হার্ট এটাক নিয়ে হৃদরোগ হসপিটালে ভর্তি হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায় নাই।
কেন? যে পরিমাণ খাবার আমরা খাচ্ছি, মাঝে মাঝে খাবার যে না খেয়ে থাকা দরকার, এটা কি কেউ কখনো বলেছে?
আর এখনকার মায়েদের যে কী অবস্থা! তারা যে বাচ্চাকে কী বানাতে চায়… আল্লাহু আকবর!
মানে এখন তো মেয়েরা বাচ্চা নিতে চায় না। এত ক্যান্সারের অন্যতম কারণ এই এক বাচ্চা। ১০ জনের খাবার সে এক বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে। বাচ্চা এইরকম একটা হাতি হয়ে যাচ্ছে নড়তেও পারে না চড়তেও পারে না। কারণ তার টোটাল সিস্টেম ব্লক করে রাখছে। হরমোনগুলোকে ব্লক করে রাখছে।
তো ওর ওর কী হচ্ছে?
এই যে দেখেন নিউজ দেখাচ্ছে, অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সমস্যায় ৭০ শতাংশ মানুষ।
তো কী করতে হবে?
ধর্মে যেটাকে বলা হচ্ছে রোজা বা উপবাস, সেটাকে এখন বিজ্ঞান বলছে ইন্টারমিডিয়েট ফাস্টিং।
প্রাকটিস করেন। মাঝে মাঝে প্র্যাকটিস করেন। এটা নানানভাবে করতে পারেন।
যেমন- স্কিপিং মিল।
মনে হল যে, ঠিক আছে আজ সকালে নাস্তা খাবো না।
অথবা সকালে খেয়েছেন, দুপুরে খেলেন না। রাত্রে আবার হালকা করে খেলেন।
অথবা সকালে খেয়েছেন, দুপুরেও খেলেন না, রাতেও খেলেন না।
এইভাবে মাঝে মাঝে আপনি মিল অফ দিতে পারেন।
এটাকে বলে স্কিপিং মিল।
দুই নাম্বার – ১২, ১৬, ১৮, ২০, ২২ অথবা ২৪ ঘন্টার ফাস্টিং।
আমাদের দেশে এর চেয়ে বেশি দরকার নাই কারণ ঐরকম মরবিড ওবেসিটি আমাদের দেশে নাই।
আমেরিকাতে আছে, ৪০০ কেজি ওজন।
তো সুস্থ থাকতে চান?
যদি আজকে একটি জিনিস নিয়ে যেতে চান, তাহলে বলব ফাস্টিং নিয়ে যান।
কী করবেন?
আপনি আগামীকাল থেকে নাস্তা করবেন না। কী করবেন? ব্রেকফাস্ট করবেন।
দেখেন, ব্রেকফাস্টকে আপনি ভাঙেন।
Breakfast - breaks your fasting.
আর ফাস্টিং এপ্রোপ্রিয়েট হচ্ছে মিনিমাম আট ঘন্টা, চমৎকার হচ্ছে ১২ ঘন্টা।
আপনি দেখেন, পৃথিবীতে স্মার্ট, দারুণ ফিগার, দীর্ঘজীবি মানুষরা শেষ খাবারটা কখন খায়?
চীনে যান, থাইল্যান্ডে যান। আপনি ছয়টার পরে রেস্টুরেন্ট খোলা পাবেন না।
আর আমরা তো ছয়টার সময় নাস্তা খাই। রাতের খাবার তো বাকি আছে।
ফলাফল দেখেন, প্রত্যেকের মধ্যপ্রদেশ আমাদের স্ফীত।
তো কী করবেন?
আপনার দিনের শেষ খাবার হবে সন্ধ্যা সাতটার ভেতরে এবং দিনের প্রথম খাবার হবে সকাল সাতটা।
১২ ঘণ্টা ফাস্টিং করেন। আমি জোর দিয়ে বলছি, আপনি সুস্থতার নতুন দিগন্তে প্রবেশ করবেন।
এবং রোগ নিরাময় অটোফেজির প্রক্রিয়া শুধু এখন শুরু হয়েছে তা না। মধ্যযুগের কিংবদন্তীর চিকিৎসক হচ্ছে ইবনে সিনা। যাকে পাশ্চাত্যে বলতো আভি দিনা। কত বড় চিকিৎসক ছিলেন তিনি।
তার লেখা ‘ক্যানন মেডিসিন’ সেই সময় রোম কেন্দ্রিক পাশ্চাত্যে ৫০০ বছর টেক্সট বুক হিসেবে পড়ানো হয়েছিল।
এবং তিনি ক্রনিক রোগ নিরাময়ে সর্বপ্রথম এই অটোফেজি প্রক্রিয়া প্রয়োগ করেন এবং দারুণ ফলাফল লাভ করেন।
বিশ্ব এক নতুন দিকে কিন্তু টার্ন নিচ্ছে।
চিকিৎসা পদ্ধতিও কিন্তু এখন আবার নতুন দিকে টার্ন নিচ্ছে।
এখনকার কনসেপ্ট হচ্ছে যে, prevention is better than treatment. প্রতিরোধ করতে হবে। এবং যদি হয়েও যায়, লাইফস্টাইল ডিজিজ যেমন হৃদরোগ বলেন, উচ্চ রক্তচাপ বলেন, ডায়াবেটিস বলেন, ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বলেন, স্থূলতা বলেন প্রত্যেকটা কিউরেবল। সেই সুযোগ আছে।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে আমাদের দুই দিনের প্রোগ্রাম আছে। এটেন্ড করেন। জানেন পুরো প্রক্রিয়াটা। জানেন, অনুসরণ করেন। আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন। আপনি নিরাময় করতে পারবেন।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আপনি যখন ধুমপান করছেন, ৭০০০ ক্যামিকেল আপনার রক্তে প্রবেশ করছে।
এবং পৃথিবীতে যত মানুষ মারা যায় হার্ট এটাক করে এর তিনটি কারণের একটি কারণ হচ্ছে ধূমপান।
আমেরিকাতে গড়ে পাঁচটি মৃত্যুর একটি মৃত্যুর কারণ হচ্ছে ধূমপান।
এবং ধূমপায়ীরা গড়ে ২২ বছর আগে মৃত্যুবরণ করে অধূমপায়ীদের থেকে। এবং ধূমপায়ীদের মধ্যে হার্ট এটাকের সম্ভাবনা অধূমপায়ীর থেকে ছয় গুণ বেশি।
তাই ধূমপান বর্জন করা উচিৎ।
এনজিওগ্রামটা হচ্ছে - ফর ডায়গনসিস।
আপনি যদি মনে করেন যে এ- প্রথম হচ্ছে ডায়গনসিসটা কনফার্ম হওয়া উচিৎ।
এক।
দুই।
আপনি যদি করতে না চান- না আ- আর আপনি যদি মনে করেন যে এই প্রোগ্রাম ফলো করে কী লাভ হলো, সেই ক্ষেত্রে দুই বছর তিন বছর পর আপনি চেক এনজিওগ্রাম করে দেখতে পারেন।
অর্থাৎ এখন এনজিওগ্রাম করলে দুটো লাভ হতে পারে - এক, ডায়গনসিস কনফার্ম হওয়া। দুই, যদি আপনি আমাদের প্রোগ্রাম ফলো করেন, আমরা দুই বছর বলি মিনিমাম।
কারণ ব্লক আসলে এত দ্রুত রিভার্স হয় না।
ডক্টর ডীন অর্নিশ তিনি দেখছেন যে, কখনো কখনো পাঁচ বছর লাগে ফুল রিভার্স করতে।
তো সেই ক্ষেত্রে দুই বছর পর আপনি আবার এনজিওগ্রাম করতে পারেন।
আবার আপনি যদি মনে করেন, ওরে বাপরে বাপ! এনজিওগ্রাম করতে যেয়ে যদি দুর্ঘটনা ঘটে!
কোনো অসুবিধা নাই।
বাকি টুলজগুলো আপনি ফলো করবেন এবং বাকি টুলসগুলো দিয়ে এসেস করবেন। আপনি ভালো থাকবেন এবং আমাদের প্রোগ্রাম ফলো করলে আমরা বিশ্বাস করি আপনার ব্লকেজ থাকবে না।
এক্সারসাইজের ক্ষেত্রে তিনটি এক্সারসাইজ যদি একসাথে করেন, ইউ উইল গেট অল বেনিফিটস ফ্রম এক্সারসাইজ।
এক হচ্ছে, কমপক্ষে তিরিশ মিনিট জোরে জোরে হাঁটা।
কারণ বাকিগুলো আপনি আসলে কন্টিনিউ করতে পারবেন না।
তিরিশ মিনিট হাঁটা, ঘন্টায় চার মাইল বেগে।
অর্থাৎ মিনিটে ১৩০/৩৫/৪০বার পা ফেলতে হবে আপনাকে।
যদি আপনার হৃদরোগ না থাকে, তাহলে আপনি পাঁচ মিনিট একটু জগিং করতে পারেন।
এবং ১৫-২০ মিনিট ইয়োগা।
এই তিনটিকে যদি আপনি একত্রিত করতে পারেন, ব্যায়ামের সমস্ত বেনিফিট আপনি পাবেন।
আপনি যদি ইয়োগা না করেন, পৃথিবীর সমস্ত ব্যায়াম করলেও আপনি পুরো বেনিফিট পাবেন না।
কেন? কারণ একজন মানুষ কতটা সুস্থ থাকে এর একটি সিঙ্গেল টেস্ট হচ্ছে তার মেরুদণ্ড কতটা ফ্লেক্সিবল। সে কতটা ডান বাম সামনে পেছনে ঘোরাতে পারে।
আপনি দেখেন, যত বয়স তত সমস্যা হচ্ছে মেরুদণ্ড। অল্প সময় হলেও ব্যায়াম করবেন প্রতিদিন।
সাথে হাঁটা, হাঁটার বিকল্প হতে পারে সুইমিং। সাইকেলিং। সবকিছু হতে পারে।
কিন্তু সবচেয়ে সহজ করা যেতে পারে সেটি হচ্ছে হাঁটা।
ধরেন, চিনি এবং তেল।
ধরেন শরীরে আপনার ফ্যাট খুঁজতে যান কী দিয়ে? আপনাকে ডক্টর ফ্যাট চেক করতে বলে। ফাস্টিং লিপিড প্রোফাইল।
ফাস্টিং লিপিড প্রোফাইলে দুটো চেক করা হয়।
একটা হচ্ছে কোলেস্টেরল। আরেকটা হচ্ছে ট্রাই গ্লিসারাইড।
কোলেস্টেরল এর তিনটা পার্ট আছে।
একটা হচ্ছে টোটাল কোলেস্টেরল। আরেকটা হচ্ছে গুড কোলেস্টেরল। এইচডিএল। আরেকটা হচ্ছে ব্যাড কোলেস্টেরল এলডিএল।
এই এলডিএল আপনার ব্লকেজ তৈরি করে। স্ট্রোক তৈরি করতে পারে। এটা উচ্চ রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। নানাবিধ জটিলতা তৈরি করতে পারে।
আর এইচডিএল এটা হচ্ছে গুড কোলেস্টেরল। কেন?
যেহেতু এলডিএল শরীরের জন্যে খারাপ, এইচডিএল যত বাড়বে, ঐ শরীর থেকে এলডিএলকে ধরে পায়খানার সাথে বের করে দেবে।
আর ট্রাই গ্লিসারিড, যখন বাড়তির দিকে যাবে, তখন আপনার শরীরে ব্লকেজ তৈরি হতে পারে। ডায়াবেটিস তৈরি করতে পারে।
এখন এইগুলো মার্কার। কিন্তু এগুলো বাড়ে কীভাবে?
আপনি ভাত খেলেও বাড়বে, যখন আপনি চিনি খাবেন। সাদা চাল খাবেন। সাদা ময়দা খাবেন।
তখন এই দুটোই বাড়তে পারে।দেখবেন, যত আপনি চিনি খাবেন, সাদা চাল সাদা ময়দা, আপনার ট্রাই গ্লিসারিড বাড়বে।
যত ট্রাই গ্লিসারিড বাড়বে এই ট্রাই গ্লিসারিড আপনার ডায়বেটিস তৈরি করতে পারে। হৃদরোগ তৈরি করতে পারে। হার্ট এট্যাক ঘটাইতে পারে।
অন্যদিকে আপনি যখন গরু খাসি তেল চর্বি খাচ্ছেন, আপনার এলডিএল বাড়বে।
এলডিএল যখন বাড়বে, এটা হার্ট এট্যাক তৈরি করতে পারে। স্ট্রোক তৈরি করতে পারে।
সো দুইভাবেই এটা করতে পারে।
আবার ট্রাই গ্লিসারিড দুইভাবে বাড়তে পারে।
চর্বি খেলেও বাড়তে পারে। তেল খেলেও বাড়তে পারে। চিনি খেলেও বাড়তে পারে।
সেইজন্যে এই-এই দুটো হচ্ছে মনুষ্যনির্মিত খাবার।
আমি আবারো বলছি, পৃথিবীতে একমাত্র প্রাণী মানুষ যে ব্যাপক মাত্রায় অসুস্থ হচ্ছে।
এর মূল কারণ হচ্ছে মানুষ একমাত্র প্রাণী যে তার স্বাভাবিক খাবার নরমাল খাবারকে বদলে ফেলেছে।
এবং এর মূল কারণ ম্যান মেড ফুড।
কারণ পৃথিবীতে যে দুটো যে কয়টি খাবার অসুস্থতার জন্যে দায়ী তার মধ্যে হচ্ছে চিনি এবং তেল।
এই দুটোই ম্যান মেড ফুড।
এবং এই দুটোই হাইলি রিফাইনড ফুড।
প্রথমত যেটা হচ্ছে, বহু বছর ডিম নিয়ে তেলেসমাতি চলছে।
ডিম খাবো কি খাবো না- এটা নিয়ে বিশ্ব ডিম দিবসে বলছে, প্রতিদিন দুইটা চারটা করে ডিম খান।
এমনভাবে দিল মনে হলো যে ডিম না খাইলে বাঁচবেনই না আপনি!
আবার আরেক গ্রুপ বলছে, খবরদার! ডিম খেলে কিন্তু খবর আছে।
এখন ডিম নিয়ে প্রথম তথ্য হচ্ছে যে আমরা কোয়ান্টামে একদম মধ্যবর্তী অবস্থান যে, আপনি প্রতিদিন একটা ডিম খেতে পারবেন যদি আপনার কোলেস্টেরল স্বাভাবিক থাকে এবং আপনি স্বাভাবিক কর্মব্যস্ত লাইফ লিড করেন।
কেন?
একটা ডিমের কুসুমে ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে - এলডিএল কোলেস্টেরল।
এবং সেভেন্টি পার্সেন্ট ক্ষেত্রে এটি রক্তের কোলেস্টেরল বাড়ায় না। থার্টি পার্সেন্ট ক্ষেত্রে এটি কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে।
ঐ ৩০ শতাংশ মানুষ নিজেকে এসেস করে খাবে।
অর্থাৎ তার যদি কোলেস্টেরল বেশি থাকে, তিনি কুসুমটাকে এভয়েড করবেন। সাদা অংশ খাবেন।
কিন্তু যার কোলেস্টেরল নরমাল আছে, তিনি কেন কুসুম বাদ দিবেন?
কারণ যতগুলো পুষ্টিকর খাবার আছে তার মধ্যে ডিম চমৎকার। এবং এটা সপ্তাহে চার পাঁচদিন তো আপনি খেতেই পারেন।
তবে আপনি যদি আমাদের ফর্মূলা অনুযায়ী হৃদরোগ উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিসের রোগী হয়ে থাকেন, তাহলে বছর দুয়েক আমরা ডিম খেতে নিষেধ করছি।
এরপরে আপনি খেতে পারবেন।
আবার ফর্মুলাগুলো মনে রাখতে হবে যে, ৯০ শতাংশ আপনি উদ্ভিজ খাবার এবং ১০ শতাংশ প্রাণীজ খাবার।
আপনাকে ব্যালেন্স করতে হবে।
দুই নম্বর যেটি হচ্ছে, যে মেডিটেশনের নানান ফর্মুলা আছে।
আমরা মনে করি যে, মেডিটেশন সবসময় রিচ হচ্ছে প্রাচ্যে।
এবং আমেরিকাতে যত মেথড রয়েছে, সব প্রাচ্য থেকে গেছে।
তো প্রাচ্যেরই সবচেয়ে লেটেস্ট হচ্ছে কোয়ান্টাম মেথড।
এবং আমরা বিশ্বাস করি - It is the latest, it is most effective, it is simple.
অনেক মেথড আছে, আপনি যে-কোনো মেথড করতে পারেন।
কিন্তু আপনি যদি কোয়ান্টামের সদস্য হয়ে থাকেন, অন্যদিকে না যাওয়াই ভালো।
কারণ আপনি যখন কয়েকজনের কাছে যাবেন, আপনি বিভ্রান্ত হবেন।
কারণ - it is effective.
আমি ব্যক্তিগত জীবনে ২৩ বছর থেকে মেডিটেশন করছি। আমাদের অনেকেই আছেন ৩০ বছর থেকে মেডিটেশন করছেন।
So, it is effective. It is proved.
প্রথম যেটা হচ্ছে, সহজ ফর্মুলা যে, আপনি বুঝে বুঝে ভালো খাবারগুলো কিনবেন যেখানে কেমিক্যাল নাই।
আর আপনি ছয় থেকে আট ঘন্টা ভিজিয়ে রাখেন। নাইনটি পার্সেন্ট কেমিক্যাল বেরিয়ে যাবে।
ব্যস! আপনি এই সমাজ থেকে তো বাইরে যেতে পারবেন না।
গ্রামেও ভেজাল।
এবং আরও কিছু টেকনিক আছে। কুসুম গরম পানির মধ্যে একটু লবণ দিয়ে রাখলে সহজেই কেমিক্যাল বেরিয়ে যাবে।
এবং এটা আমাদের সচেতনতা বাড়া উচিৎ। ব্যক্তি উদ্যোগে আমরা চেষ্টা করতে পারি।
ছাদে গাছ লাগাতে পারি। আপনার সুযোগ আছে, কোথাও জায়গা আছে, আপনি চাষ করেন না কেন? এগিয়ে আসেন।
সরকার কখনো একা সমাজ চেঞ্জ করতে পারে না। সমাজ চেঞ্জ হয় ব্যক্তি মাধ্যমে।
আপনি এগিয়ে আসেন।
এই যে আমি যে এলাকায় থাকি বনশ্রীতে, দুই বছর আগে একটা দোকানও ছিল না বাদাম পাওয়া যায়। আজকে হাঁটতে গেলে ১৫/২০/৩০টা দোকান। যেখানে দামী দামী কাঠ বাদাম পাওয়া যায় এখন।
সেদিন পেপারে নিউজ দেখলাম, দ্বিগুণ হয়ে গেছে বাদাম ইমপোর্ট।
কেন? আমরা বলছি, অনেকে বলছেন, মানুষ খাচ্ছে।
বলতে শুরু করেন, করতে শুরু করেন। এর প্রভাব পড়বে।
কারণ ভালো কাজের প্রভাব আছে। খারাপ কাজেরও প্রভাব আছে।
বাট স্টার্ট করতে হবে।
৩১ মার্চ ২০২২
১ মে ২০২১
১৫ এপ্রিল ২০২১
১৩ এপ্রিল ২০২১
৯ এপ্রিল ২০২১