প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০২১
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্ট্রেসকে বলছে একুশ শতকের মহামারি! হাজারো রোগের কারণ এই স্ট্রেস।
স্ট্রেসের খুব সরল ডেফিনেশন হচ্ছে Absence of happiness বা সুখের অভাব। আর সুখের নিবাস হলো আমাদের মন। জীবনের উদ্দেশ্য হলো সুখী হওয়া। কিন্তু আমরা সুখী হতে পারি না কেন? কারণ আমরা সুখ খুঁজি ভুল জায়গায়।
এই ভিডিওতে সুখ সহজ ভাষায় স্ট্রেসের ৪টি মূল কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পাশাপাশি কীভাবে আপনি স্ট্রেসমুক্ত হতে পারেন সেটাও তুলে ধরা হয়েছে।
আসসালামু আলাকুম। আপনাদের সবার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক!
শ্রদ্ধেয় সুধী-মণ্ডলী! আপনাদের সবাইকে কোয়ান্টাম ভুবনে, প্রশান্তির ভুবনে, আনন্দের ভুবনে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছি।
ইতিহাস এবং সাহিত্যের খুব জনপ্রিয় একজন চরিত্র হচ্ছেন নাসির উদ্দিন হোজা। তাকে নিয়ে অনেক মজার মজার গল্প আছে। মূলত বিভিন্ন হাস্যরসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তিনি মেসেজ দিতে চাইতেন।
তো একবার নাসির উদ্দিন হোজাকে দেখা গেল একটা ল্যাম্পপোস্টের নিচে। সে কিছু একটা খুঁজছে। তাকে খুঁজতে দেখে কৌতূহলী হয়ে আরো চার-পাঁচজন এসে জড়ো হলো। এবং তারাও হোজার সাথে খোঁজা শুরু করল।
অনেকক্ষণ পার হয়ে গেল। তেমন কিছু পাওয়া গেল না।
তো একজন হোজাকে প্রশ্ন করছেন, হোজা! তুমি কী খুঁজছ? কিছু তো পাচ্ছি না।
হোজা তখন বলল যে দেখো, আমার ঝোলা থেকে একটা সোনার মোহর পড়ে গেছে। আমি সেই মোহরটা খুঁজছি।
তো যখন সবাই শুনল যে, সোনার মোহর পড়ে গেছে তো সবাই আবার একটু সিরিয়াস হয়ে গেল যে না তাহলে তো এটা খুঁজে পাওয়া দরকার। নতুন করে খোঁজা শুরু হলো।
কিন্তু অনেকক্ষণ পার হয়ে গেল মোহরের কোনো চিহ্নও পাওয়া গেল না।
এবার একজনের সন্দেহ হলো। তো এবার সে হোজাকে প্রশ্ন করছে যে, হোজা! তুমি একটু ঠিক করে বলতো তোমার মোহরটা তুমি কোথায় হারিয়েছ?
তো হোজা তখন একটা হাসি দিয়ে বলল যে দেখো, সন্ধ্যেবেলা একটু বেড়াতে বেরিয়েছিলাম ঐ দূরের পাহাড়ের কাছে। ওখানে বেড়াতে গিয়ে আমার ঝোলা থেকে মোহরটা পড়ে যায়। তারপর থেকেই এই ল্যাম্পপোস্টের নিচে এটা খুঁজছি।
তো স্বাভাবিকভাবেই যারা তার সাথে খুঁজছিলেন তারা তো এবার রীতিমতো উত্তেজিত যে, হোজা! তুমি তোমার মোহর হারিয়েছ ঐ পাহাড়ের নিচে অন্ধকারে। আর তুমি এই ল্যাম্পপোস্টের নিচে এতক্ষণ ধরে খুঁজছ এবং আমাদেরকে বেগার খাটিয়েছ কারণ কী? বলতে হবে কারণটা কী?
তো হোজা তখন আরেকটা হাসি দিল। বলল যে দেখো, কারণ খুব সহজ। ওখানে তাকিয়ে দেখো অন্ধকার। কিছু দেখা যায় না। খুঁজতে অসুবিধা। এখানে দেখো ল্যাম্পপোস্টের আলো আছে। সবকিছু পরিষ্কার দেখা যায়। খুঁজতে সুবিধা। এজন্যে এখানে খুঁজছি।
তো আসলে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে হোজা আমাদেরকে দুটো মেসেজ দিতে চেয়েছেন।
প্রথম মেসেজ হচ্ছে, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে প্রত্যেকটা মানুষ কখনো সচেতনভাবে কখনো অবচেতনভাবে সারাজীবন ধরেই একটা কিছু খুঁজছে।
কিন্তু অধিকাংশের কাছে ঠিক পরিষ্কার নয় যে কী খুঁজছি আমি? এক।
দুই নম্বর হচ্ছে যে, যদি সে বুঝতেও পারে যে সে কী খুঁজছে এখন সমস্যা হচ্ছে সে ভুল জায়গায় খুঁজছে।
তো প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা খুব সহজ। আমরা সবাই একটা জিনিস খুঁজছি। সেটা দুই অক্ষরের একটা ছোট্ট শব্দ ‘সুখ’। সমস্যাটা হচ্ছে আমরা ভুল জায়গায় খুঁজছি।
কীরকম?
এই যে ‘স্ট্রেস’ এর অনেক বড় বড় ভারী ভারী ডেফিনেশন আছে। স্ট্রেসের খুব সরল ডেফিনেশন হচ্ছে Absence of happiness.
আপনি যেটা খুঁজছেন আপনি সেটা পাচ্ছেন না। কারণ আপনি ভুল জায়গায় খুঁজছেন।
তো আমরা আজকে ভাগ্যবান যে, আমরা সঠিক জায়গায় খোঁজার জন্যে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি আরকি। একদম রাইট জায়গায় খোঁজার জন্যে আমরা উপস্থিত হয়েছি।
তো আসলে এই যে স্ট্রেস এটা হচ্ছে রিয়েল পেন্ডামিক।
এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এই স্ট্রেসকে ২১ শতকের এপিডেমিক হিসেবে অনেক আগেই অ্যাখ্যা দিয়েছে।
স্ট্রেসের কারণগুলো ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা একটু বোঝার চেষ্টা করব এবং এর সমাধান খুঁজব।
তাহলে কীভাবে স্ট্রেস থেকে মুক্ত হয়ে আমি সুখী জীবনের পথে এগোতে পারি?
স্ট্রেস বা টেনশন যে শব্দটি আপনার পছন্দ ব্যবহার করেন কোনো অসুবিধা নাই।
স্ট্রেসের প্রধান কারণ মূলত চারটি। আরো কিছু ছোট ছোট কারণ আছে কিন্তু ওগুলো তত গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু মূল কারণ চারটি।
এর মধ্যে প্রথম কারণটি আমাদের অনেককেই বিস্মিত করবে যে, স্ট্রেসের প্রথম কারণ হচ্ছে Unthankfulness ‘না শুকরিয়া’।
আমাদের জীবনের এখন সবচেয়ে বড় বাস্তবতা হচ্ছে- আমাদের জীবনে আসলে এখন কোনো শুকরিয়া নাই। নাই নাই খাই খাই পাই পাই চাই চাই চাই। যত পাই তত চাই।
যত পাচ্ছি তত অভাব যেন বেড়ে যাচ্ছে। এটা এক দুষ্টচক্র।
এবং এটা নিয়ে খুব বিখ্যাত ঘটনা হচ্ছে আমেরিকার খুব খ্যাতনামা ধনকুবের ছিলেন স্যার জন ডি রকফেলার।
তো তাকে একবার এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন যে, Sir, what is enough?
খুব ছোট্ট প্রশ্ন কিন্তু খুব ইনটেলিজেন্ট। অর্থাৎ কতটুকু হলে একজন মানুষের জন্যে যথেষ্ট?
স্যার রকফেলার যেমন ধনকুবের ছিলেন তেমন বুদ্ধিমান ও ছিলেন। তার উত্তরটা ছিল আরো ছোট।
উত্তরটা ছিল- Just one more. আরেকটা। মানে এটা হচ্ছে আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি।
আপনি যাই পাচ্ছেন প্রথম চিন্তা হচ্ছে, one more আরেকটা।
আসলে আমরা মনে করি যে, যত কিনব তত বোধ হয় আমার শান্তি থাকবে। তত আমার প্রশান্তি বাড়বে।
খুব করুণ ঘটনা বলি। সত্য ঘটনা।
আজকে থেকে প্রায় ৪০/৪৫ বছর আগের ঘটনা।
ঢাকা শহরের অত্যন্ত অভিজাত এলাকার বেগম সাহেব তিনি থাকেন। এবং তার তিন তলা এক ইউনিট বাড়ি। এবং তিনতালায় হচ্ছে তার বেডরুম। বেডরুম না বলে বেড হল বলা ভালো।
এবং বেড রুমে তার যে বিছানা, বিছানা না বলে পালঙ্ক বলতে হবে কারণ ৪৫ বছর আগে সেই বিছানা বানাতে খরচ হয়েছিল মাত্র ১০ লক্ষ টাকা।
এবং আমরা ধরেন বিছানায় কী ব্যবহার করি? জাজিম ব্যবহার করি বা ফোম ব্যবহার করি বা ম্যাট্রেস ব্যবহার করি। তিনি ব্যবহার করলেন পাখির নরম পালক।
এবং সেটা দিয়ে ইয়া মোটা করে গদি বানানো হয়েছে তার জন্যে এবং প্রত্যেক দিন এটাকে রোদে দিতে হয় যাতে পশমগুলো ফোলে। কারণ ওনার ইচ্ছে হচ্ছে উনি যখন বিছানায় গিয়ে শোবেন ওনার যেন মনে হয় উনি বাতাসের ওপর শুয়ে আছেন। অর্থাৎ এত নরম বিছানা।
কিন্তু বিছানা নরম হলে কী হবে? ঘুম আসে না। রাত্রি ১২টা ১০ মিলিগ্রাম। ১টা ২০ মিলিগ্রাম। ২টা ৩০ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ ঘুমের ওষুধের ডোজ বাড়ছে শুধু। ঘুম আসে না। সারা রাত ঘরের মধ্যে পায়চারি করছেন। পাশে ১০ লক্ষ টাকার বিছানা।
তো টাকা দিয়ে আপনি দামী খাট কিনতে পারবেন, টাকা দিয়ে আপনি ঘুম কিনতে পারবেন না। অর্থ দিয়ে আপনি আরাম-আয়েশের সমস্ত উপকরণ কিনতে পারবেন। অর্থ দিয়ে আপনি প্রশান্তি কিনতে পারবেন না।
কখন প্রশান্তি পাব আমরা?
যখন অন্তর থেকে বলতে পারব শোকর আলহামদুলিল্লাহ প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ। থ্যাংকস গড! আমাকে তুমি যা দিয়েছ আমি কৃতজ্ঞ।
এবং এই না শুকরিয়া হচ্ছে স্ট্রেসের এক নম্বর কারণ।
স্ট্রেসের দুই নাম্বার কারণ, এটা মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায়- ফ্লাইট অর ফাইট রেসপন্স।
আমাদের পূর্ব পুরুষরা যখন বনে জঙ্গলে থাকতেন তখন হিংস্র জন্তুর মুখোমুখি হলে তার সামনে দুটো অপশন থাকত। হয় ফাইট করতে হবে অর্থাৎ পশুটাকে মারতে হবে। অথবা ফ্লাইট করতে হবে মানে পালাতে হবে। মারো অথবা পালাও ফ্লাইট অর ফাইট।
এখন জেনেটিক্যালি তাদের কাছ থেকে এই অটোনোমিক নার্ভাস রেসপন্সটা আমাদের ভেতরে চলে এসছে। এবং এখন যদিও বনও নাই বন্য পশুও নাই কিন্তু এই রেসপন্সটা আমাদের ভেতরে রয়ে গেছে।
এবং এখন আমাদের জীবনে বাস্তব বিপদ যতটা না বেশি বিপদের কল্পনা তার চেয়ে বেশি যে, যদি এই হয় তাহলে কী হবে!
আসলে আমরা এখানে যারা আছি আমরা কয়জন বলতে পারব যে এমন একটি দিন আপনি কাটাতে পেরেছেন যে দিনটিতে আপনার ভেতরে বিপদ বা সমস্যা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা মনে একটিবারের জন্যেও কাজ করে নি?
যারা কাটাতে পেরেছেন They are really someone. আমরা তাদেরকে অভিনন্দন জানাই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তারা এমন একটি দিন আসলে তারা পান না।
অথচ সমস্যার সাথে সে সমস্যা শারীরিক হোক পেশাগত হোক পারিবারিক হোক বা সামাজিক হোক সমস্যার সাথে যখনই আপনি টেনশন যুক্ত করবেন সমস্যা তখন সংকটে রূপান্তরিত হবে।
যেমন এই যে করোনা। এই করোনার সময় যারা করোনা নিয়ে বেশি আতঙ্কিত ছিলেন তারাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি।
এবং যত মানুষ করোনায় মারা গেছেন এদের একটা বড় অংশ শুধু করোনা হয়েছে এই চিন্তা করে হার্ট এটাকে মারা গেছেন যে, আমি করোনা রোগী।
কিন্তু যারা সতর্ক ছিলেন যে, না সচেতন থাকতে হবে সতর্ক থাকতে হবে কিন্তু আতঙ্ক মুক্ত ছিলেন তারা সুস্থ ছিলেন। এবং এটার প্রমাণ হচ্ছে আমরা কোয়ান্টামের আমরা যারা আছি আমরা।
আমরা কোয়ান্টামের শুধু আতঙ্কমুক্ত ছিলাম তাই না আমরা নিজেরা যেমন নির্ভার ছিলাম যে না ইনশাআল্লাহ সুস্থ থাকব এবং তার সাথে সাথে এই সময়টাতে সবচেয়ে বিপদজনক কাজটাতে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। সেটা হচ্ছে করোনা শহিদদের দাফন কার্যক্রম।
এবং আপনাদেরকে শুকরিয়া আদায় করে বলতে পারি আমাদের প্রায় হাজার ভলান্টিয়ার এই কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে এবং তাদের একজনকেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যেতে হয় নাই। সবাই সুস্থ ছিলেন।
তাহলে সহজ সমাধানটা কী? সহজ সমাধান হচ্ছে, যখনই সমস্যা এটা ডক্টর দীপক চোপড়ার এক খুব চমৎকার প্রেসক্রিপশন আছে, উনি বলেন স্টপ। Any problem? just STOP.
Stop মানে কি? S দিয়ে হচ্ছে Stop. T দিয়ে হচ্ছে Take a deep breath. একটা লম্বা দম নিন। একবার বা দুইবার একটা লম্বা দম নিন। আপনার মনটা তখন স্থির Calm and quiet হয়ে যাবে।
এরপর O দিয়ে তিনি বলছেন observe যে সমস্যাটা কী এখন ভালো করে অবজারভ করেন।
এবং P হচ্ছে proceed- Now take decision what to do!
তো সারাদিনে যখনই সুযোগ পান মাঝে মাঝেই একটু বুক ফুলিয়ে দম নেন। যত দম নেবেন টেনশনমুক্ত থাকাটা এটা আপনার একটা সহজাত হয়ে যাবে।
স্ট্রেস না টেনশনের তৃতীয় কারণ হচ্ছে বহন করে বেড়ানো। অর্থাৎ ক্ষমা করতে না পারা।
আসলে আমরা আমাদের অতীতকে বহন করে বেড়াই। এবং যতটা না অতীতের সুখ স্মৃতিকে আমরা বহন করে বেড়াই তার চেয়ে বেশি অতীতের দুঃখজনক স্মৃতিগুলোকে আমরা বহন করে বেড়াই।
আপনি দেখেন ধরেন ১৫ বছর আগে আপনাকে কেউ একটা কথা বলেছিল আপনি তখন কোনো জবাব দিতে পারেন নি। ১৫ বছর পার হয়ে গেছে যিনি বলেছিলেন তিনি ভুলে গেছেন আপনি কিন্তু ভোলেন নি।
এখনো মাঝে মাঝে মনে হয়- ইসরে! ঐদিন যদি এই কথাটা মনে পড়ত ব্যাটাকে একেবারে ছিলে ফেলতে পারতাম। মনেও পড়ে নাই। ছিলতেও পারেন নাই। ভুলতেও পারছেন না। ১৫ বছর ধরে আপনি বহন করে বেড়াচ্ছেন।
আপনি দেখেন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন মান অভিমান হয় ধরেন স্বামী-স্ত্রীর তাদের দাম্পত্য জীবনে ধরেন ১০০টা স্মৃতি। তার মধ্যে ৫০টা সুখের স্মৃতি ৫০টা দুঃখের স্মৃতি।
তো যখন মান অভিমান হয় তখন কোন স্মৃতিগুলো মনে পড়ে? ১৯৫৫ সালে তুমি এই কথা বলেছিলে। ভেবেছ আমি ভুলে গেছি? ভুলি নাই আরকি। সিরিয়াল ধরে তখন সব বলা শুরু করে আরকি।
অর্থাৎ আমরা কিন্তু সুখের স্মৃতিগুলো বহন করি না। আমরা দুঃখের স্মৃতিগুলোকে কষ্টের স্মৃতিগুলোকে বহন করে বেড়াই।
তো এটা হচ্ছে টেনশনের তিন নম্বর কারণ। ক্ষমা করতে না পারা। আমরা আসলে এখন আর ক্ষমা করতে পারি না। আমরা কেউ কাউকে এখন আর ক্ষমা করতে পারি না। না স্বামী স্ত্রীকে ক্ষমা করতে পারেন না স্ত্রী স্বামীকে ক্ষমা করতে পারেন। না মা-বাবা সন্তানকে ক্ষমা করতে পারে না সন্তান মা-বাবাকে ক্ষমা করতে পারে।
আমরা অতীতকে বহন করে বেড়াই।
চতুর্থ কারণ টেনশনের, ভার্চুয়াল ভাইরাস। আসলে আমরা এখন যতটা না রিয়েল ওয়ার্ল্ডে বসবাস করি আমরা তার চেয়ে বেশি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে বসবাস করি।
একটা ঘটনা। বাবার জন্মদিন। বার্থ ডে। আজকাল তো জন্মদিন মনে রাখার জন্যে কোনো কষ্ট করতে হয় না। আগে অনেক কষ্ট করে মনে রাখতে হতো। এখন কোনো কষ্ট করতে হয় না। অটোম্যাটিক পপআপ উঠে যায় আরকি। আজকে তো আমার বাবার বার্থডে আরকি।
তো ছেলে হঠাৎ করে তার ল্যাপটপে উঠে গেল যে, আজকে বাবার বার্থ ডে। তার বাবা পাশের রুমে। সেও ল্যাপটপে কাজ করছে। আবার উঠে পাশের রুমে যাব!
এখান থেকেই সে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে- Happy birthday baba। বাবাও পাশের রুম থেকে আবার ফিরতি স্ট্যাটাস দিচ্ছেন Thank you son. I am so grateful to you.
আরে ব্যাটা! উঠে গিয়ে বাপব্যাটা নিজেদেরকে একটু জড়িয়ে ধর না! বাবা-ছেলের সম্পর্ক কি ফেসবুকের স্ট্যাটাসের সম্পর্ক?
এবং আজকে আমাদের পারিবারিক অশান্তি যে বেড়ে গেছে এত বেশি পরিমাণে এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এই ফেসবুক। এবং এখন হাজবেন্ড ওয়াইফ কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না।
এখন হাজবেন্ড তার ফেসবুক একাউন্টে ছদ্মনামে ফ্রেন্ড হয়ে থাকে। ওয়াইফ তার হাজবেন্ডের ফেসবুক একাউন্টে ছদ্মনামে ফ্রেন্ড হয়ে থাকে। কেন? শুধু খোঁজ রাখার জন্যে যে কার সাথে লাইন মারে! বিশ্বাস করে না।
এবং সবচেয়ে বড় পরিহাস হচ্ছে যে, এই প্রযুক্তির মানে কর্তাব্যক্তি যারা এই যে মি স্টিভ জবস উনি যখন আইপ্যাড আবিষ্কার করলেন আইপ্যাড বের করলেন, তো তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, মি. জবস! আপনার বাচ্চারা কি আইপ্যাড ব্যবহার করেছে?
তো স্টিভ জবস বলেছিলেন যে, না। আমার বাচ্চারা এটা ব্যবহার করে নি। আমার বাচ্চারা কতটুকু প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার করবে এটা আমরা পারিবারিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করি।
বিল গেটস তার সন্তানদের ১৪ বছর বয়স হওয়ার আগ পর্যন্ত স্মার্টফোনতো দূরের কথা ঐ যে বেসিক ফোন বেসিক ফোন ব্যবহার করার অনুমতি পান নি ১৪ বছর বয়স হওয়ার আগ পর্যন্ত।
মি. জাকারবার্গ আমেরিকার কংগ্রেসে গত বছর তাকে ডাকা হলো এবং প্রশ্ন করল এক সিনিটার যে, মি. জাকারবার্গ, গতকালকে রাতে আপনি কোন হোটেলে স্টে করেছেন আমাদেরকে কি একটু বলবেন।
তো মি. জাকারবার্গ বলেছিলেন যে, নো। এটা তো আমার পার্সনাল ইনফরমেশন। এটা আমি আপনাদেরকে কেন বলব?
তিনি গতকাল রাতে কোন হোটেলে স্টে করেছেন এটুকু তথ্য দিতে তিনি রাজি নন। আর আমরা আমাদের এমন কোনো তথ্য নাই যেটা ফেসবুকে দেই না।
তো আসলে টেক জায়ান্ট যারা তারা অর্গানিক লাইফ লিড করছেন। আর আমাদেরকে ডিজিটাল লাইফে এডিক্টেড করছেন। এটা নিয়ে আমাদের এখন ভাবার সময় হয়েছে।
এবং এই করোনার সময়ে যদি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি কারো হয়ে থাকে সেটা হচ্ছে আমাদের বাচ্চাদের সবচেয়ে বড় সর্বনাশ আমরা করে ফেলেছি। আমাদের বাচ্চারা ডিজিটাল ডিভাইসে এডিক্টেড হয়ে গেছে। এবং মা-বাবারা সাফার করছেন।
বাচ্চারা এখন অনেক বেশি উগ্র হয়ে গেছে। বাচ্চারা এখন অনেক বেশি স্ট্রেসড হয়ে গেছে। আগে আগে কিছু কথা শুনত, এখন মোটেই কথা শুনতে চায় না। আপনারা সাফার করছেন।
সমাধান কী? একটাই।
হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের অলি বুজুর্গ আমাদের মুনিঋষি আমাদের নবী রসুল যারা ছিলেন আপনারা জানেন যে তারা ধ্যান করতেন মোরাকাবা করতেন। এই ধ্যান মোরাকাবার আধুনিক বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে মেডিটেশন।
এই মেডিটেশন হচ্ছে- The solution of all stress.
এবং আজকে সারা পৃথিবীতে এখন মেডিটেশনকে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আসলে এই যে মেডিটেশন বলেন ধ্যান বলেন মোরাকাবা বলেন আসলে আমরা ধ্যান মোরাকাবা শব্দ দুটি এ কারণে ব্যবহার করি না, ধ্যান মোরাকাবা শুনলে লোকজন ভয় পেয়ে যায়। মনে করে যে, ঘর সংসার ছেড়ে নিমতলায় গিয়ে বসতে হবে। মেডিটেশন শুনলে খুব খুশি। বলে যে না, এটাতো মর্ডান জিনিস। এসি রুমে চেয়ারে বসে করা যায়। একই জিনিস। পদ্ধতিগত কিছু কিছু পার্থক্য আছে কিন্তু মূল জিনিস একই।
আপনি দেখেন, আমাদের নবীরসুলদের দিকে তাকান। আমাদের মহামানবদের দিকে তাকান।
হযরত ইব্রাহিম (আ) মেডিটেশন করেছেন। হযরত মুসা (আ) মেডিটেশন করেছেন। হযরত ঈসা (আ) যীশুখৃষ্ট মেডিটেশন করেছেন। মহামতি বুদ্ধ বছরের পর বছর অশ্বথ বৃক্ষের নিচে ধ্যান করেছেন মেডিটশন করেছেন।
আমাদের মুনিঋষি যারা ছিলেন- ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র, ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, ঠাকুর লোকনাথ ব্রহ্মচারী ধ্যান করেছেন মেডিটেশন করেছেন।
আমরা জানি রসুলুল্লাহ (স) নবুয়াত প্রাপ্তির আগে দীর্ঘ ১৫ বছর হেরা গুহায় তিনি ধ্যান করেছেন মেডিটশন করেছেন। তারপর তিনি নবুয়াত লাভ করেছেন।
এবং পবিত্র কোরআনে এই ধ্যানকে কত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সূরা আলে ইমরানের ১৯০-১৯১ আয়াতে জ্ঞানীদের বিশেষত্ব বলতে গিয়ে আল্লাহ স্বয়ং বলছেন- যে জ্ঞানীদের সিফাত হচ্ছে তারা ধ্যানী।
এবং পবিত্র কোরআনে ধ্যান বা মেডিটেশন বোঝাতে দুটো শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে তাফাক্কুর আরেকটি হচ্ছে তাদাব্বুর। তাফাক্কুর এবং তাদাব্বুর এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে মেডিটেশন কন্টেমপ্লেশন।
বিজ্ঞানী নিউটন আপেল গাছের নিচে বসে মেডিটেশন করছিলেন। নিউটিনের আগে আমাদের পূর্ব পুরুষরা কি গাছ থেকে আম পড়তে দেখেন নি? দেখেছেন। দেখার সাথে সাথে কী করেছেন? এদিক ওদিক তাকিয়েছেন। দৌড়ে গিয়ে ধরেছেন। ছুরি দিয়ে ছিলেছেন। ঝাল মরিচ লবণ লাগিয়েছেন। খেয়ে ফেলেছেন।
কেন? কারণ তিনি দেখছেন সাধারণ জাগ্রত অবস্থায়। একটা আম পড়ল। দেখার সাথে সাথে তার জিভে পানি চলে আসলো যে আহাহা! আহা! নগদ নগদ একটা পাওয়া গেল।
একই ঘটনা নিউটন দেখলেন মেডিটেটিভ লেভেলে। ধ্যান নিমগ্ন আত্মনিমগ্ন নিউটন গভীর কনসেন্ট্রেশন। একটা আপেল পড়ল। নিউটনের মনে আপেলটা খাওয়ার ইচ্ছা জাগ্রত হয় নি। তার মনে প্রশ্ন জাগল যে, আপেলটা নিচে পড়ল কেন? ওপরে উঠল না কেন? This is meditation.
আর মেডিটেশনের সবচেয়ে সহজ কার্যকর এবং ফলপ্রসূ পদ্ধতি হচ্ছে কোয়ান্টাম মেথড।
আমরা পরম করুণাময়ের শুকরিয়া আদায় করি যে, দীর্ঘ ২৯ বছর কোয়ান্টাম মেথড অনুষ্ঠিত হচ্ছে এর কোর্স আমাদের দেশে। এবং আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং বৈজ্ঞানিক উপলব্ধির এক চমৎকার সুসমন্বয় হচ্ছে এই কোয়ান্টাম মেথড।
এবং এই কোর্স এত আনন্দময় যে কোর্স শুরুর আগে প্রত্যেকেই একটা আতঙ্ক নিয়ে ঢোকেন এ কোর্সে যে ১০ ঘণ্টা ক্লাস করতে হবে ভাই বলেন কী! এ তো মাথা খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু ১০ ঘণ্টা শেষে প্রত্যেকেই বলেন, শেষ হয়ে গেল! আর ঘণ্টা দুয়েক চলত। ভালোই তো লাগছিল আরকি।
কারণ ভালো জিনিসের সাথে যখন থাকি তখন তো আসলে সময় কীভাবে কেটে যায় তো টেরই পাওয়া যায় না।
এবং যে কারণে আমাদের কোর্সে অধ্যাপক ড নুরুল ইসলাম খান স্যার মরহুম, অধ্যাপক ড এম আর খান স্যার মরহুম, ব্রিগেডয়ার আব্দুল মালিক স্যারের মতো ব্যস্ত মানুষ তাদের ব্যস্ততা কী পরিমাণ! তারা দুজন জাতীয় অধ্যাপক, অধ্যাপক ড নুরুল ইসলাম এবং এম আর খান স্যার যখন বেঁচেছিলেন কী পরিমাণ ব্যস্ত তারা ছিলেন বুঝতেই পারেন!
এবং ব্রিগেডয়ার আব্দুল মালিক স্যারও অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। তাদের মতো মানুষ চারদিন টানা ৪০ ঘণ্টা বসে তারা ক্লাস করে গেছেন এবং যাওয়ার সময় বলে গেছেন খুব খোলাখুলিভাবে যে, আমাদের দেশের প্রত্যেকটা মানুষের এই মেডিটেশন কোর্স করা উচিৎ।
প্রথম আপনার ভেতরে শুকরিয়ার এক ফল্গুধারা সৃষ্টি হবে। আপনি অনুভব করবেন যে কতকিছু দিয়ে স্রষ্টা আপনাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
আবার এই আমাদের ভুল বুঝবেন না যে, শুকরিয়া মানে হচ্ছে কাজকর্ম মানে হচ্ছে বসে বসে ঝিমানো। এটার নাম শুকরিয়া না। শুকরিয়া মানে হচ্ছে আমার যা আছে প্রভু তার জন্যে তোমাকে ধন্যবাদ। এটা দিয়ে আমি নতুনভাবে জীবন শুরু করব। এটার নাম হচ্ছে শুকরিয়া।
ঘুমের ওষুধ খেয়ে আর নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে না ইনশাআল্লাহ। কোর্সের প্রথম দিন বাসায় যাবেন ঘুমের ওষুধগুলো হাতে নেবেন ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলবেন। বিছানায় যাবেন শুয়ে পড়বেন এবং ঘুম।
কেন মেডিটেশন করবেন?
রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে। আপনি অনুভব করবেন যে, না। রেগে গেলাম তো হেরে গেলাম।
আসলে রাগী মানুষদের জন্যে খুব মায়া হয়। কারণ রাগী মানুষ তারা বোঝেন না যে তার শেষ জীবনটা কত নিঃসঙ্গতায় কাটবে! কারণ আপনজনের সাথে তার অনেক দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। শেষজীবনে আসলে তিনি কাউকে কাছে পান না। খুব ভাগ্যবান দুয়েকজন ছাড়া।
মেডিটেশন কেন করবেন?
কারণ আপনি সবাইকে খুব সহজেই ক্ষমা করে দিতে পারবেন। হালকা অনুভব করবেন। আচ্ছা যা করেছে করেছে আচ্ছা মাফ করে দিই।
মেডিটেশন আপনি করবেন এবং আপনার সন্তানকে নিয়ে আসবেন। কারণ এই যে ভার্চুয়াল ভাইরাস, এই যে স্ক্রিন এডিকশন- এই ভার্চুয়াল ভাইরাস থেকে এবং এই স্ক্রিন এডিকশন থেকে মুক্ত থাকার আর দ্বিতীয় কোনো রাস্তা নাই। যদি থাকে আপনারা আমাদেরকে বলতে পারেন।
মেডিটেশন আপনি কেন করবেন?
কারণ শতকরা ৭৫ ভাগ রোগ থেকে আপনি মুক্ত থাকবেন। এবং এখন সারা পৃথিবীর চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, শতকরা ৭৫ ভাগ রোগের কারণ হচ্ছে স্ট্রেস। এবং এই স্ট্রেস রিলেটেড যে রোগগুলো ৭৫ ভাগ এই রোগ থেকে আপনি মুক্ত থাকবেন। এবং যে কারণে এখন আমেরিকাতে ডাক্তারদের কারিকুলামের মধ্যে মেডিটেশনকে ইনক্লুড করা হচ্ছে।
এবং আমেরিকাতে যেহেতু হেলথ ইনস্যুরেন্স বাধ্যতামূলক হেলথ ইনস্যুরেন্স ফর্মে আপনি শুধু যদি টিক চিহ্ন দেন যে নিয়মিত মেডিটেশন করেন আপনার প্রিমিয়ামে ফিফটি থেকে থার্টি ফাইভ পার্সেন্ট পর্যন্ত ডিসকাউন্ট।
কেন? কারণ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলো জানে যে যেহেতু আপনি মেডিটেশন করেন আপনার অসুখবিসুখ কম হবে। আপনার পেছনে ইনস্যুরেন্স কোম্পানির খরচ কম হবে।
মেডিটেশন আপনি কেন করবেন?
কাজের প্রতি পড়শোনার প্রতি আপনার আগ্রহ বাড়বে মনোযোগ বাড়বে। পরিবারে ভুল বোঝাবুঝির পরিমাণ কমে আসবে।
আমরা পরম করুণাময়ের শুকরিয়া আদায় করে বলতে পারি যে আমাদের বাংলাদেশে আজকে যে কয়টি সুখী পরিবার আছে এর মধ্যে অধিকাংশ পরিবারই হচ্ছে আমাদের কোয়ান্টাম পরিবার। এটা আমরা শুকরিয়া আদায় করে বলতে পারি।
আসলে মেডিটেশন কেন করব আমরা?
নাইনটিন নাইন্টি ফাইভ ইংল্যান্ডে সমাজবিজ্ঞানীরা সারা পৃথিবীতে জরিপ পরিচালনা করেছিল, কোন দেশের মানুষ সবচেয়ে সুখী?
সেই জরিপে ইংল্যান্ডের অবস্থান ছিল ৪৭ নাম্বারে। মানে যাদের বিজ্ঞানীরা জরিপ করেছিল তাদের অবস্থান ছিল ৪৭ নাম্বারে। আমেরিকা যাকে অনেকেই স্বর্গ মনে করেন- সে আমেরিকার অবস্থান ছিল ৫৪ নাম্বারে।
এবং সেই জরিপে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল এক নাম্বারে।
১৯৯৫ সালে আমরা ছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী জাতি।
২০১৯ সাল সাল সারা পৃথিবীতে এই জরিপটি আবার পরিচালনা করা হলো। এবং দুঃখজনক হচ্ছে বাংলাদেশ এখন প্রথম ১০০টার মধ্যেও নাই।
অর্থনৈতিকভাবে আমরা অনেক এগিয়ে গেছি। কিন্তু এই সুখটা আমরা হারাতে বসেছি। কেন? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, এক) না শুকরিয়া। এবং দুই) অসুখী পরিবার।
তো মেডিটেশন এই দুটো ক্ষেত্রেই চমৎকারভাবে আমাদেরকে সাহায্য করে।
আমরা আমাদের আজকের এই আলোচনার একেবারেই শেষ পর্যায়ে চলে এসছি।
একটা ছোট্ট ঘটনা দিয়ে শেষ করি।
আজকে থেকে ২৯ বছর আগে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শহীদ আল বোখারি মহাজাতক তিনি যখন ডায়াসে দাঁড়িয়ে বলছিলেন যে, আসেন টেনশন থাকবে না। আসেন অনিদ্রা থাকবে না। আসেন এই রোগগুলো থাকবে না।
সামনে যারা বসেছিলেন তারা বলছিলেন, আপনি যে বলছেন থাকবে না কোনো উদাহরণ আছে? আমাদের শিক্ষক বলেছিলেন যে, না কোনো উদাহরণ নাই। আসেন আপনিই উদাহরণ হবেন। আজকে ২৯ বছর আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি আজকে উদাহরণের কোনো অভাব নাই।
আমরা শুধু উদাহরণ দেখাতে পারব আপনাদের কয়েকদিন ধরে এখানে বসিয়ে বসিয়ে।
তো আমরা শুধু একটি উদাহরণ বলে আমরা আমাদের আজকের আলোচনার সমাপ্তি টানি।
ছেলেটি ক্লাস টেনে পড়ত বাংলা মিডিয়ামে। নাম নাইবা বললাম।
পরপর তিন বছর এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারে নি। এই যে আমাদের বাচ্চাদের একটা বছর নষ্ট হয়ে গেছে দুশ্চিন্তা করবেন না। এই ছেলে পরপর তিন বছর সে এসএসসি পরীক্ষাই দিতে পারে নি।
মা-বাবা ফ্রাস্ট্রেটেড। কারণ ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তাদের। ফ্রাস্ট্রেটেড এমন যে, তুই তো গোল্লায় গেছিস। তোকে দিয়ে তো আর কিচ্ছু হবে না।
আত্মীয় স্বজনরা আর কিছু না পারুক একটা কাজ খুব ভালো পারে। খোঁচা দেয়া।
এবং এই ছেলে সে নিজে এত ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে গেল যে সুইসাইড করার চিন্তাও তার মাথায় ঘুরছে তখন। কারণ তার সহপাঠী যারা ছিল তারা যখন ভার্সিটিতে এডমিশনের জন্যে প্রিপারেশন নিচ্ছে সে তখনও এসএসসিই পাশ করতে পারে নি।
যখন এই তার মানসিক অবস্থা সেই সময় তার মা তাকে নিয়ে জয়েন করলেন কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে।
নাইনটিন নাইন্টি ফাইভ। আজকে টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান। এর মাঝখানের ঘটনাগুলো বলছি। কোর্স করার মাস কয়েক পরের ঘটনা।
সেই ছেলে যে সুইসাইড করার চিন্তা করছিল তার কনফিডেন্স এত তীব্র হলো সে পড়ত ক্লাস টেনে বাংলা মিডিয়ামে সে পরীক্ষা দিল ইংলিশ মিডিয়ামে ও লেভেলে। এবং ও লেভেল পরীক্ষার তখন ছ’মাস বাকি। দুই বছরের সিলেবাস কমপ্লিট করল ছয় মাসে। এবং এক্সিলেন্ট রেজাল্ট।
এরপর এ লেভেল। এক্সিলেন্ট রেজাল্ট। স্কলারশীপ নিয়ে আমেরিকায় চলে গেল গ্রাজুয়েশন করার জন্যে। এবং যে বছর সে আমেরিকায় গ্রাজুয়েশন করে ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ বর্ষ সেরা ছাত্র হিসেবে পুরস্কার পায়।
এরপর হার্ভার্ড এবং এমআইটি দুই জায়গা থেকে তার পিএইচডি অফার আসে। হার্ভার্ডে পিএইচডি অফার সে গ্রহণ করে। এখন সে পিএইচডি কমপ্লিট করে শিকাগোর সুইজারল্যান্ডের সার্ন ল্যাবরেটরিতে গবেষক হিসেবে কাজ করছে।
এবং এই যে গড পার্টিকেল হিগস বোসন যে আবিষ্কার হলো এর মধ্যে যে কয়জন বিজ্ঞানী কাজ করেছেন তার মধ্যে একজন হচ্ছেন আমাদের এই ছেলে।
তো যে ছেলে তিন বছর এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারে নি সেই ছেলে যদি এইভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে So why not we? Why not our children? আমাদের ছেলেমেয়েরা কেন পারবে না?
তো সবার প্রতি আমাদের আহ্বান থাকছে যে, কোয়ান্টামে আসুন। সপরিবারে আসুন। শোকর আলহামদুলিল্লাহ! আমরা ভালো আছি। আমাদের সাথে আসুন, আপনিও ভালো থাকবেন।
খোদা হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম।
১৩ মার্চ ২০২২