প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২০
০২ মার্চ ২০২০ সোমবার মুক্ত আলোচনার ৯৯ তম পর্বে একথা বলেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, চিকিৎসা নৃ-বিজ্ঞানী ও যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-অধ্যাপক ডা. শাহাদুজ্জামান। আলাপচারিতার ভিত্তিতে আয়োজিত এবারের পর্বটি সঞ্চালনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদ।
বাংলা মননশীল কথাসাহিত্যের একজন উল্লেখযোগ্য লেখক শাহাদুজ্জামান। মানবজীবনের বিচিত্র বাঁক, সুগভীর উপলব্ধি ও সূক্ষ্মতর পর্যবেক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার সাহিত্যকর্মে। সাহিত্য সম্পর্কে তার অভিমত—‘আমরা একটা বিক্ষুব্ধ, বিশৃঙ্খল, ত্রাসের পৃথিবীতে বাস করছি এখন। একক মানুষের পক্ষে এর ভার বহন করা দুঃসাধ্য। এখন প্রয়োজন পরস্পরের নিকটবর্তী হওয়া। শুধু নিজের বেদনা নয়, চোখ রাখা প্রয়োজন চারপাশে ছড়ানো অগণিত বেদনার দিকে। প্রয়োজন একে অন্যের ক্ষতকে বুঝে যৌথভাবে এই গুমোটকে মোকাবেলা করা। ... সাহিত্য পরস্পরের বেদনার এই মেলবন্ধন ঘটাতে পারে। সাহিত্যই পারে নিজের কুঠুরির বাইরে এনে জগতের বেদনাকে দেখাতে।’
শাহাদুজ্জামানের জন্ম ১৯৬০ সালের ১০ নভেম্বর, ঢাকায়। মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে তিনি ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। আশির দশকে মেডিকেল কলেজের ছাত্র থাকাকালে সাহিত্য ও রাজনীতির মেলবন্ধন খুঁজতে গিয়ে বন্ধুর অনুপ্রেরণায় লিটল ম্যাগাজিনে অনুবাদকের কাজ শুরু করেন তিনি। এর পাশাপাশি রেডিও, চলচ্চিত্র, থিয়েটার, চিত্রকলা ও মৌলিক লেখালেখির জগতে ছিল তার সক্রিয় পদচারণা। আর সেই অভিজ্ঞতার ছাপ আমরা পাই তার নিরীক্ষাধর্মী সাহিত্যচর্চায়।
একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন—‘...আমি অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে লিখি নি। নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছি। গৌতম বুদ্ধের সেই কথাটা—‘নিজে নিজের প্রদীপ হও’—এটা আমার বিশ্বাস যে, কেউ যদি নিজের প্রতি সৎ থাকে, তবে সেই সততা কোথাও না কোথাও গিয়ে স্পর্শ করে। ... আমার লেখা পাঠকের কাছে পৌঁছাবে কিনা ... আমি তা নিয়ে বিশেষ চিন্তিত ছিলাম না। শুরু থেকেই আমার এমন একটা ভাবনা ছিল যে, পাঠকের রুচিকে শুধু ফলো করলে হবে না, গাইডও করতে হবে।’
১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্পগ্রন্থ কয়েকটি বিহ্বলগল্প। সে-সময় কথাসাহিত্য পাণ্ডুলিপির একটি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে এ বইটি। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৪০টি। যার মধ্যে ক্রাচের কর্নেল; একজন কমলালেবু; আমস্টার্ডাম ডায়েরি এবং অন্যান্য; কথা পরম্পরা; ভাবনা ভাষান্তর; চিরকুট; পশ্চিমের মেঘে সোনার সিংহ; কেশের আড়ে পাহাড়; লেখালেখি; টুকরো ভাবনা; আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সাথে উল্লেখযোগ্য। তার লেখা গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র কমলা রকেট। নিয়মিত মঞ্চায়িত হচ্ছে নাটক ক্রাচের কর্নেল। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। এবছর ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই’ মননশীল শাখায় পুরস্কৃত হয়েছে তার মামলার সাক্ষী ময়না পাখি বইটি।
পেশাজীবনে ডা. শাহাদুজ্জামান একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর ব্র্যাকের অধীনে গ্রামীণ জনস্বাস্থ্য প্রকল্পে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করেছেন তিনি। সেখানে মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবন-সংগ্রাম ও ঐশ্বর্য নতুনভাবে জীবনকে দেখার উদ্দীপনা দিয়েছে তাকে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং নেদারল্যান্ডসের আমস্টার্ডাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা নৃ-বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পেশা হিসেবে তিনি বেছে নেন অধ্যাপনা ও গবেষণা। যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়, নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। স্বাস্থ্য-বিষয়ক গবেষণা পরিচালনা করেছেন আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রাইটন এন্ড সাসেক্স মেডিকেল স্কুল, ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের মেডিকেল এনথ্রোপলজি এন্ড গ্লোবাল হেলথ বিভাগে অধ্যাপনা করছেন।
চিকিৎসা নৃ-বিজ্ঞানী ও কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের বহুমাত্রিক কাজের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় নান্দনিক ভারসাম্য ও সুপরিকল্পনার ছাপ। এ প্রসঙ্গে একটি আলাপচারিতায় তিনি বলেন—‘আমি দুটো প্যারালাল জীবনযাপন করি। একটা আমার পেশাগত জীবন—শিক্ষকতা, গবেষণা। আরেকটা লেখক জীবন। ... এগুলো খুবই পরিশ্রমসাধ্য, সময়সাপেক্ষ কাজ। এর বাইরে রয়েছে পরিবারের নানা দায়িত্ব। ... লেখালেখি আমি ছাড়তে চাই নি। ফলে ধীরে ধীরে এই অর্গানাইজড হওয়াটাকে রপ্ত করতে হয়েছে।’
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
২৮ আগস্ট ২০২৩
২১ মার্চ ২০২৩
২৮ জানুয়ারি ২০২৩
২৩ জানুয়ারি ২০২২
২২ জানুয়ারি ২০২২
২১ জানুয়ারি ২০২২