প্রকাশিত: ৪ জুন ২০২০
“কুল্লু নাফসিন যা-ইক্বাতুল মাউত” - প্রতিটি প্রাণকেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে।
মৃত্যুর এই অমোঘ ক্ষণ আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই আসবে। এরপর অনন্ত জীবনের পথে আমাদের যাত্রা হবে একাকীর।
কিন্তু মৃত্যুক্ষণ এবং শেষ শয়ানের অন্তিম যাত্রায় মৃতের পাশে পরিজন-প্র্রিয়জন কেউ থাকবে না- দূরতম কল্পনায়ও কি তা আমরা ভাবি!
ভাবি না।
অথচ করোনা পরবর্তী পৃথিবী আজ সে বাস্তবতার মুখোমুখিই দাঁড় করিয়েছে আমাদের। সংক্রমণের ভয়ে ছেলে আসছে না মৃত মায়ের দাফনে, ভাই যাচ্ছে না ভাইয়ের লাশ তুলতে, স্বামী পালাচ্ছে মৃতা স্ত্রীকে ফেলে।
৫০ বছরের বিবি আয়মন। করোনাভাইরাস সন্দেহে ছেলে তাকে রেখে যায় হাসপাতালে। হাতে গুঁজে দিয়ে যায় হাজার দুই টাকা (!)।
একসময় বিবি আয়মন মারা যান। কিন্তু মুষ্টিবদ্ধ হাতে তখনও ধরে ছিলেন ছেলের দেয়া টাকাটা। দাফনের সময় মৃতদেহ জীবাণুমুক্ত করতে গিয়ে স্বেচ্ছাকর্মীরা তার হাতে গোঁজা টাকাটা খুঁজে পান।
৩২ বছরের দবির উদ্দিন মারা যান যক্ষ্মারোগে। কিন্তু করোনা সন্দেহে আশপাশের কেউ এমনকি তার আপন ভাইও আসে নি- দাফন দূরে থাক, বাড়িতে পর্যন্ত না।
স্বেচ্ছাকর্মীরা না যাওয়া পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা লাশ পড়েছিল ঘরময় ছড়ানো রক্তের মধ্যেই। মৃত্যুর আগে অবিশ্রান্ত কাশির দমকে যা বেরিয়ে এসেছল।
২৭ বছরের রেশমা। হাসপাতালে একটি সন্তান জন্ম দেয়ার পর মারা যান করোনাভাইরাস পজিটিভ এই নারী। কিন্তু সেটা শোনার পর থেকে রেশমার স্বামীকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় নি। অগত্যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খবর দেয় স্বেচ্ছাসেবীদের।
পরিচয় গোপন রাখতে এই মানুষগুলোর আসল নাম বা ঠিকানা বলা হলো না। কিন্তু প্রতিটি ঘটনাই সত্যি। শুধু তাই না, ঘটনাগুলোর সাক্ষী নিবেদিতপ্রাণ একদল স্বেচ্ছাসেবী যারা এই মানুষগুলোকে নিজের মায়ের মতো, ভাইয়ের মতো, বোনের মতো মমতায়, আন্তরিকতায়, প্রার্থনায় শেষ বিদায় জানিয়েছে।
ডেটলাইন ৭ এপ্রিল, ২০২০। করোনাভাইরাস সংক্রমণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মৃত্যুবরণ করছে মানুষ। আর আতঙ্কগ্রস্ত স্বজনের অনীহা বা অপারগতার কারণে শেষ যাত্রায় তাদের জুটছে হৃদয়বিদারক সব অনাদর আর অবহেলার ঘটনা।
এমনি সময়ে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের দু’শতাধিক স্বেচ্ছাকর্মী মিলে সারাদেশে গড়ে তোলেন করোনা-মৃতদের দাফন ও সৎকারে বিশেষ টিম।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে দাফনের বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকায় ১০২ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৮টি অঞ্চলে মোট ১৮০ জন স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত হন।
ঢাকায় কেন্দ্রীয় দফতর নির্ধারিত স্থানে ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবীর একটি দল দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করতে থাকেন যাতে খবর পাওয়ামাত্র যে-কোনো স্থানে তারা ছুটে যেতে পারেন।
করোনাকালীন সময়ে এ পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ৩৬৪টি দাফন ও ৩৯টি সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। [সর্বশেষ ১২ আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত ৫৯১৯টি দাফন, ৬৫১টি সৎকার, ৩৩টি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও ৪৩টি সমাধি সম্পন্ন হয়েছে।]
মৃতদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংসদ সদস্যের মতো বিশিষ্টরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন সমাজের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
কিন্তু মৃতের যথাযোগ্য সম্মান জানাতে কর্মীরা কোনো পার্থক্য করেন নি।
কোভিডে আক্রান্ত হয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী যারা মৃত্যুবরণ করছেন, তাদের জন্যেও ছুটে গেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
মৃতা নারী হলে তার দাফনের জন্যে রয়েছে নারী স্বেচ্ছাসেবীর দল
স্বেচ্ছাকর্মীদের নিরাপত্তার জন্যে নেয়া হয় পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা।
দুই স্তরের এয়ারটাইট ও ওয়াটারপ্রুফ পিপি-গাউন, তিন স্তরের হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, চশমা, ফেসশিল্ড ও গামবুট পরিধান করে কাজ শুরু করেন তারা।
আর প্রতিটি দাফন বা সৎকারশেষে তা খুলে পুড়িয়ে ফেলা হয়। কর্মীর সুরক্ষাকে নিশ্চিত করতে কয়েক ধাপে ব্যবহার করা হয় জীবাণুনাশক স্প্রে।
ইসলামের বিধিমতে একজন মুসলমানকে যথাযথভাবে শেষ বিদায় জানানো ‘ফরজে কিফায়া’।
অর্থাৎ যদি কিছু লোক আদায় করে তাহলে অন্যদের ওপর থেকে তা মাফ হয়ে যায়।
কিন্তু যদি জেনেশুনে সবাই বর্জন করে তাহলে সবাই গুনাহগার হবে।
করোনা-মৃতদের দাফনে শামিল হয়ে কোয়ান্টাম শুধু এই ফরজে কিফায়াই আদায় করছে না, মমতা দিয়ে পূরণের চেষ্টা করছে সেই স্বজনের শূন্যতা এসময় যে পাশে থাকতে পারছে না।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের এ সেবা তৎপরতাকে নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দেশব্যাপী মিডিয়ায়।
এগিয়ে আসুন আপনিও!
করোনার সাথে লড়াই করে যিনি মারা গেছেন তিনি আপনার আপনজন। তাকে শহিদ হিসেবে সম্মান জানানোর এই পুণ্যময় মানবিক উদ্যোগে আপনিও শামিল হোন! অর্থ, সময় বা শ্রম দিয়ে বা স্রেফ তার জন্যে দোয়া করে আপনি এ শহিদদের পাশে থাকুন।
২২ এপ্রিল ২০২২
২১ এপ্রিল ২০২২
২৪ মার্চ ২০২২
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
৩০ জুন ২০২১
২৩ মার্চ ২০২১
২৭ জানুয়ারি ২০২১