Change Language

সুস্থতার আসল রহস্য!—ডা. মনিরুজ্জামান

প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ফোর্ড মটরসের প্রতিষ্ঠাতা আমেরিকান ধনকুবের হেনরি ফোর্ডকে একবার একজন সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিল, গত ছয় মাসে আপনার জীবনে সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা কী? মিস্টার ফোর্ড একটু চিন্তা করে বললেন, ১৫ দিন আগে আমি একটি অর্ধসিদ্ধ ডিমের অর্ধেকটা কুসুমসহ খেয়ে হজম করতে পেরেছিলাম-
এটাই হচ্ছে গত ছয় মাসে আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা!!

আসলে বিলিয়ন ডলারের মালিক হলেও মি. ফোর্ড ছিলেন ভগ্নস্বাস্থ্যের মানুষ। তিনি কিচ্ছু হজম করতে পারতেন না, মাতৃদুগ্ধ ছাড়া। তার এজেন্টরা হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে মাতৃদুগ্ধ সংগ্রহ করে নিয়ে আসতেন, এটাই ছিল তার আহার!

বাস্তব সত্য হলো অর্থ-বিত্ত-যশ-প্রতিপত্তি আপনাকে সুখ দিতে পারবে না। সুখের জন্যে চাই পরিপূর্ণ সুস্থতা। আর 'ফাইভস্টার' হাসপাতাল, সেলিব্রেটি ডাক্তার বা ডায়েটেশিয়ান নয়, আপনার সুস্থতা ও সুস্বাস্থ্যের দায়িত্ব আপনার নিজের।

কী কী করলে আপনি সুস্থ থাকবেন তা সম্পর্কে অসাধারণ কিছু কথা আপনি জানতে পারবেন এই ভিডিওটি দেখলে।

আলোচনাটির বিস্তারিত অংশ নিচে দেওয়া হলো :

সুস্থতার আসল রহস্য। আসলে রহস্যের তো কোনো শেষ নাই।

সবকিছু অর্থহীন হয়ে যেতে পারে যদি সুস্থ না থাকেন!

নবীজীর (স) একটি হাদীস হচ্ছে, “বিশ্বাস বা ঈমানের পর তোমার প্রতি স্রষ্টার সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা”।

কেন?

আপনার ধনসম্পত্তি, যশ-খ্যাতি প্রভাব-প্রতিপত্তি, ব্যাংকব্যালেন্স সবকিছু অর্থহীন হয়ে যেতে পারে যদি আপনি সুস্থ না থাকেন।

আপনি তখনই এগুলো উপভোগ করতে পারবেন যদি আপনি সুস্থ থাকেন।

মিস্টার ফোর্ড! আপনার জীবনে গত ছ’মাসের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা কী?

এবং এই কথাটি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন তার সময়ের সেলেব্রিটি ধনকুবের আমেরিকার ফোর্ড মটরসের প্রতিষ্ঠাতা মিস্টার হেনরি ফোর্ড।

মিস্টার ফোর্ড হাজার কোটি ডলারের মালিক ছিলেন।

একদিন একটি প্রোগ্রাম শেষে সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, মিস্টার ফোর্ড, গত ছয় মাসে আপনার জীবনে সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা কী?

মিস্টার ফোর্ড থমকে দাঁড়ালেন। চোখ বন্ধ করে একটু চিন্তা করলেন।

এরপর বললেন যে, গত ১৫ দিন আগে আমি একটি অর্ধসিদ্ধ ডিমের অর্ধেক কুসুমসহ খেতে পেরেছিলাম এবং হজম করতে পেরেছিলাম।

এটি হচ্ছে গত ছয় মাসে আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা।

এরকম কতদিন কত আন্ডা প্রত্যেকদিন আমরা হজম করছি! কেউ কেউ দিনে দুটো তিনটাও খায়।

কিচ্ছু হজম হয় না, শুধু মাতৃদুগ্ধ ছাড়া!

আর তিনি একটা ডিমের অর্ধেক খেয়েছেন এটা তার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে, কেন?

হাজার কোটি ডলারের মালিক হলে কী হবে? তিনি কিচ্ছু হজম করতে পারছেন না। শুধু মাতৃদুগ্ধ ছাড়া।

একমাত্র মাতৃদুগ্ধ ছিল তার খাবার। এবং তার এজেন্টরা ফিডার নিয়ে হসপিটালে হসপিটালে ঘুরতেন এবং ব্রেস্ট মিল্ক কালেকশন করে নিয়ে আসতেন আর তিনি তাই খেতেন।

আমরা নিজেকে সুস্থ রাখতে পারছি না কেন?

তো বর্তমান সময়ের মতো এত রোগ এত রোগী এত হসপিটাল কি কোনোকালে মানুষ দেখেছে?

পরিসংখ্যান যা বলে, এত হসপিটাল এত রোগ এত চিকিৎসক এত সুযোগ-সুবিধা এত নার্স পৃথিবী কখনো কোনো সময়ে দেখে নাই।

তারপরেও আপনি যে-কোনো হসপিটালে যাবেন, দেখবেন জায়গা নাই, সিট নাই। সরকারি, বেসরকারিও।

তো চিকিৎসাবিজ্ঞানের এত উন্নতির পরেও আমরা অসুস্থ হচ্ছি কেন?

চিকিৎসাবিজ্ঞানের এত উন্নতি সত্ত্বেও আমরা নিজেকে সুস্থ রাখতে পারছি না কেন?

চলুন, আজকে আমরা এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

গত শতাব্দির মাঝামাঝি ১৯৪৮ সালে ডব্লিউএইচও সুস্বাস্থ্যের এক অভূতপূর্ব ডেফিনিশন তারা দিয়েছিল।

তারা বলেছিল, যে - Health is a state of complete physical, mental, spiritual and social well-being, and not merely the absence of disease or infermity.

একে যদি আমরা বাংলা করি তাহলে এরকম দাঁড়াতে পারে যে, রোগ বা অক্ষমতার অনুপস্থিতি সুস্বাস্থ্য নয়। বরং একজন মানুষকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী তখনই বলা যাবে যখন তিনি শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং আত্মিকভাবে সুস্থ থাকবেন এবং প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর থাকবেন।

প্রাথমিকভাবে ডব্লিওএইচও সংজ্ঞাতে শুধু শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক এই তিনটি ডাইমেনশন তারা যুক্ত করেছিলেন।

পরবর্তীতে ২৬টি মুসলিমপ্রধান দেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তারা ফোর্থ ডাইমেনশন আত্মিকভাবে যোগ করেন।

দেহ, মন এবং আত্মার এক অসাধারণ সমন্বয় হচ্ছে মানুষ!

একজন মানুষের সুস্বাস্থ্যের পূর্ণাঙ্গ ডেফিনিশন দিতে গেলে অবশ্যই আত্মিকটাকে যুক্ত করতে হবে। নাহলে পুরো বিষয়টা ইনকমপ্লিট হবে।

কেন?

এই যে আমরা বলছি মানুষ। মানুষ মানে কি শুধু এই দৃশ্যমান দেহটা?

এর বাইরে কিছু নাই?

আসলে দেহ, মন এবং আত্মার এক অপূর্ব এক অসাধারণ সমন্বয় হচ্ছে মানুষ।

দেহ নিয়ে কখনো বিতর্ক হয় নাই যে, অমুকের দেহ আছে কিনা। দেহ তো দেখা যায়।

কিন্তু সবসময় যেটা নিয়ে বিতর্ক সেটা হচ্ছে মন এবং আত্মা।

তো একজন বিতর্ক করুক আর না করুক, মানুষ মানে হচ্ছে তার দেহ আছে, তার মন আছে, তার আত্মা আছে।

এবং এই তিনটি অস্তিত্ব যদি আমরা বিশ্বাস না করি, আমার ঈমানই থাকে না।

আমি যদি ধার্মিক হই, আমাকে বিশ্বাস করতে হবে আমার আত্মা আছে। কারণ মেডিকেল সায়েন্সে কিন্তু আমদের এই উপমহাদেশ এই দেশগুলোতে যখন কেউ মারা যায় বলা হয় যে, কার্ডিও রেসপিরেটরি ফেইলিউর। হার্ট ফেল করে মানে তার লাং ফেল করে সে মারা গেছে।

আমেরিকায় মারা গেলে বলে যে, ব্রেন ডেথ হয়েছে তার।

তো ব্রেন যদি ডেথ না হয়, হার্ট যদি ফেল না করে তাহলে সে মরবে না?

অর্থাৎ এখানে আত্মার ডিপারচারটাকে অস্বীকার করা হয়।

আর আত্মার ডিপারচার যদি আমি অস্বীকার করি তাহলে আমার ধর্মই থাকে না।

তো আমরা বরং কম্প্রিহেনসিভভাবে আলোচনার চেষ্টা করি।

যে মানুষ হচ্ছে দেহ, মন এবং আত্মার এক অসাধারণ এক অপূর্ব এক ইউনিক কম্বিনেশন যা আর কারো মধ্যে নাই। কোনো জন্তুর মধ্যে নাই। কারো মধ্যে নাই।

তো দেহ আছে। তার মানে দেহের সুস্থতা আছে, দেহের অসুস্থতা আছে।

তো দেহ থাকার কারণে যদি তার সুস্থতা থাকে তার অসুস্থতা থাকে, তাহলে মন যেহেতু একটা কম্পোনেন্ট, মনের সুস্থতা আছে, মনের অসুস্থতা আছে।

আত্মার একটি কম্পোনেন্ট - তারও সুস্থতা আছে, তারও অসুস্থতা আছে।

এবং এই তিনটি কম্পোনেন্টকে আমরা একটু আজকে খুব স্বল্প কথায় বোঝার চেষ্টা করি।

দেহের ২৫ শতাংশ এবং ৭৫ শতাংশ রোগের কারণ!

প্রথমে চলে আসি, দৈহিক অসুস্থতার কারণ।

দৈহিক অসুস্থতার কারণ কী?

মোটামুটি আমরা এইভাবে বলতে পারি যে, ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে জীবাণু সংক্রমণ, দুর্ঘটনা, জন্মগত ত্রুটি এবং আরও কিছু কারণ আছে। আমাদের যত রোগ হয় এর ২৫ শতাংশের কারণ হচ্ছে এইগুলো।

এবং ভুল বা অবৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, সঠিকভাবে দম না নেয়া এবং অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা এগুলো হচ্ছে দেহের বাকি ৭৫ শতাংশ রোগের কারণ।

প্রত্যেকটা মানুষ জন্মসূত্রেই মনের কিছু আবর্জনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে!

এরপরে চলে আসি আমরা মনের অসুস্থতার কারণ।

মনের অসুস্থতার কারণ হচ্ছে মনের আবর্জনা, মনের বিষ। প্রত্যেকটা মানুষ জন্মসূত্রেই এই আবর্জনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

এবং কিছু আবর্জনা বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার জীবনধারা, তার দৃষ্টিভঙ্গি, তার সারাউন্ডিংসের ওপর নির্ভর করে আবর্জনা বাড়তে থাকে।

কী কী সেই আবর্জনা?

রাগ বা ক্রোধ। ক্ষোভ। ঘৃণা। দুঃখ। অনুতাপ। কুচিন্তা। দুশ্চিন্তা। বিষণ্ণতা। হতাশা এবং যত ধরণের নেতিচিন্তা আছে।

এই যে বলছিলাম জন্মসূত্রে- একজন রাগী কিন্তু দেখেন ছোটবেলা থেকেই কোনো কোনো বাচ্চা এমন রাগী, ওর মাকে সারাক্ষণ দৌড়ের ওপর রাখে। কিন্তু ক্ষোভটা তার মধ্যে থাকে না। কারণ সে অতটা বোঝে না।

ক্ষোভ তৈরি হয় কখন?

যখন সে বুঝতে শেখে- আম্মা আমাকে আদর করে না। আমার আপুকে আদর করে, আমারে করে না! এই তার মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হওয়া শুরু হলো। যখন সে বুঝতে শেখে।

এভাবে দিনের পর দিন যত দিন যেতে তাকে তার ক্ষোভ তৈরি হতে থাকে।

এবং ক্ষোভের ব্যাপারে একটি উদ্ধৃতি আছে যে, ‘ক্ষোভ এমন এক বিষ যা পান করছেন আপনি, আর প্রত্যাশা করছেন মারা যাবে আপনার প্রতিপক্ষ’।

তো এই মনের আবর্জনাগুলো হচ্ছে, মনের যত রোগ আছে, এ রোগগুলোর মূল কারণ।

একজন চিকিৎসকের মূল ফোকাস হলো- রোগ এবং সিম্পটমস, পুরো অস্তিত্বের ওপর নয়!

এবার চলে আসি আত্মার অসুস্থতার কারণ।

আত্মার অসুস্থতার কারণ কী?

গীবত, বা পরচর্চা, পরকীয়া বা জেনা ব্যাভিচার, জুলুম, অবিচার, সুদ, ঘুষ, মিথ্যা সাক্ষ্য, নির্যাতন, খুন থেকে শুরু করে যত এই জাতীয় বিষয় আছে, সবগুলোই আমার আত্মার অসুস্থতার জন্যে দায়ী।

আপনি বলতে পারেন, এই বিজ্ঞানের যুগে কেমন জানি ধর্মীয় ধর্মীয় কথাবার্তা হয়ে গেল না?

চলুন এবার আমরা একটু এনালাইসিস করি।

আসলে কি এগুলো ধর্মীয় কথা? বিজ্ঞান কী বলে?

আমেরিকার একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী জার্নাল হচ্ছে ‘সার্কুলেশন’। এটা অ্যামেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের অফিসিয়াল জার্নাল।

এই অফিসিয়াল জার্নালে একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়।

আর্টিকেলটি দেখেন - Psychological health, well-being and the mind heart body connection.

Scientific statement from the American Heart Association.

এর বিষয়বস্তু কী?

পড়ি একটু! আপনি খুব মজা পাবেন। কেন মজা পাবেন পরে বলছি।

Abstract.

As a clinician's delivering healthcare, we are very good at treating disease but often not as good at treating the person.

অর্থাৎ আমেরিকার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশ্যে অ্যামেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন বলছে, যে চিকিৎসক হিসেবে আমরা অত্যন্ত ভালো, রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে।

but often not as good at treating the person- পুরো মানুষটিকে, পুরো পারসনটিকে হলিস্টিক এপ্রোচে চিকিৎসা করতে আমরা ততটা ভালো নই।

তারপর কী বলছে দেখেন -

The focus of our attention has been on the specific physical condition rather than the patient as a whole.

একজন চিকিৎসকের মূল ফোকাস থাকে যে, কী রোগ হয়েছে, তার সিম্পটম। রাদার দ্যান তার পুরো অস্তিত্বকে বিবেচনা করা হয় না।

রোগ নয়, সেই মানুষটির সামগ্রিক চিকিৎসা করতে হবে!

আমার মনে আছে আমি যখন মেডিকেলে পড়ি এবং সেই সময় সেই বইগুলোতে, পুরনো বইগুলোতে, একটা কথা লেখা থাকত যে, রোগ নয়, সেই মানুষটিকে ওভারঅল চিকিৎসা করতে হবে।

এবং পুরনো যত প্যাথি আছে, সেগুলোর একটা চিকিৎসার গোল হচ্ছে যে, রোগ নয়, সিম্পটম নয়, সেই মানুষটিকে এজ এ হোল বিচার করে চিকিৎসা করতে হবে।

ওর কাছে গেলেই চড় মেরে দেবে!

এবং ঐ আর্টিকেলে বলা হচ্ছে, যে এই যে cardiovascular disease, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্ট এট্যাকের অনেক কারণের পেছনের খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ হচ্ছে নেতিবাচক আবেগ।

Negative psychological factors. Negative emotions.

এবং এই ইমোশনসগুলো কী কী?

অ্যাংজাইটি, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, টেনশন।

দুই নম্বর, ডিপ্রেশন। বিষণ্ণতা।

ক্রনিক স্ট্রেস। দিনের পর দিন- হায় আমার কী হইল? শেষ পর্যন্ত মনে হয় গেল। আমার দ্বারা তো শেষ পর্যন্ত কিছুই হবে না! হায় আল্লাহ! চলতেই আছে প্রত্যেকদিন।

হস্টিলিটি মানে সাংঘাতিক হোস্টাইল। ওর কাছে যাওয়া যায় না। গেলেই চড় মেরে দেবে।

এই টাইপের তার অবস্থা। ভীষণ মানে সেরকম হোস্টাইল থাকে।

এবং এঙ্গার, বদরাগ। ক্রোধ। পেসিমিজম। হতাশা তার ভেতরে একদম স্থায়ীভাবে বাসা বেঁধেছে, যে কিচ্ছু হবে না।

এবং dissatisfaction - তৃপ্তি নাই তার ভেতরে। কোনোকিছুতেই তার তৃপ্তি আসে না।

সুখের অভাব।

এগুলোকে আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন বলছে যে, কোনো ব্যক্তির ভেতরে যদি এগুলো থাকে, তার হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্ট এট্যাক সময়ের ব্যাপার।

আমাদের তো কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাব আছে, প্রচুর হৃদরোগী আছে এবং আমরা স্টাডিও করেছি।

এনজিওগ্রাম- আগের এনজিওগ্রাম, পরের এনজিওগ্রাম।

হার্ট এট্যাক যতজনের হয়েছে, এর ভেতরে বড় একটা সংখ্যক মানুষের আগে কিছু এইরকম বিপর্যয় ছিল যে, হয় উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিল কোনো কারণে, অথবা এমন কোনো অর্থনৈতিক ঘটনা ঘটেছে যে রাত্রে তিনি ঘুমাতে পারছেন না, যে এই আমার পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে বা এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে! আমি কী করে রিকভারি করব!

নেতিবাচক আবেগগুলোকে দূর করার মাধ্যম মেডিটেশন!

মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন ঐ জার্নালের সেই সংখ্যায়ই বলছে যে, এইগুলো থেকে উত্তরণের জন্যে অনেক কিছুর সাথে মেডিটেশনের মাধ্যমে চেষ্টা করতে হবে এই নেতিবাচক আবেগগুলো দূর করার।

কেন?

আপনি দেখেন, একটা আমাকে সেন্টার দেখান তো পৃথিবীর, যেখানে যেয়ে আপনি বলতে পারবেন যে - ভাই, আমার রাগ তো অনেক বেশি, একটু কমায় দেন।

যদি এ কথা বলেন, আপনাকে চেম্বার বা হসপিটাল থেকে বের করে দেবে যে, ব্যাটার মাথা খারাপ হয়েছে!

বাট ডেফিনিটলি এই রাগ-ক্রোধ-ক্ষোভ ক্ষতিকর।

কিন্তু কমানোর কোনো ব্যবস্থা মডার্ন মেডিকেল সায়েন্সে নাই। কোথাও নাই!

সিঙ্গাপুরে নাই, আমেরিকাতে নাই, কোথাও নাই। কিন্তু খোদ আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন বলছে, এগুলো কমাতে হবে।

কীভাবে?

তারাই বলছে যে, কাউন্সেলিং এবং মেডিটেশন - it may be a important tools - যার ভেতর দিয়ে আপনি আপনার এই নেতিবাচক আবেগগুলো দূর করতে পারবেন।

এবং এই যে নেতিবাচক আবেগ, হতাশা, দুঃখবোধ, কষ্ট যে একজন মানুষকে কী পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে একটা সাম্প্রতিক সময়ের উদাহরণ দেই।

তিনি হচ্ছেন বেলজিয়ামের লিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট প্রফেসর ডক্টর স্টিভেন লরিস।

তিনি অত্যন্ত স্বনামধন্য একজন নিউরোলজিস্ট। হলে কী হবে? তার তিনটি বাচ্চা। একজনের বয়স নয় বছর। একজনের এগারো বছর এবং আরেকজন তেরো বছর।

এই তিন বাচ্চা এবং হাজবেন্ডকে ফেলে রেখে ওয়াইফ চলে গেছে পরকীয়া করে।

ভদ্রলোক তো এমনি প্রফেশনাল। সংসারে সময় কম দিতেন। হয়তো এই কারণেই পালিয়েছে।

ছোট্ট বাচ্চাগুলোকে নিয়ে কী করবেন লরিস?

তো যাই হোক। তিনি বলছেন যে, হঠাৎ আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল এবং মনে হলো হঠাৎ করে অথৈ সমুদ্রে পড়ে গেছি।

এখন কী করব এই ছোট্ট বাচ্চাগুলোকে নিয়ে। আমি কী করব?

তিনটা বাচ্চাকে নিয়ে অথৈ সমুদ্রে পড়ে গেলেন।

একে তো তিনি নিউরোলজিস্ট। তারপর একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি প্রফেসর। তার তো সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি। যত চিকিৎসা আছে, সব নেওয়া হলো, কিন্তু সমস্যার সমাধান হলো না।

তার উদ্বেগ যাচ্ছে না। তার কষ্ট যাচ্ছে না। তার হতাশা যাচ্ছে না। আর ডিপ্রেশন তাকে ঘিরে ফেলল।

একটা পর্যায়ে বন্ধুর পরামর্শে তিনি মেডিটেশন করা শুরু করলেন।

এবং অদ্ভুত ব্যাপার! মডার্ন মেডিকেল সায়েন্স যেখানে ফেইল করল, ধীরে ধীরে তার ডিপ্রেশন তার কষ্ট কেটে যেতে শুরু করল।

মেডিটেশন নিয়ে রীতিমতো তিনি গবেষণা শুরু করলেন...

এবং একটা পর্যায়ে তিনি এত কনভিন্সড হয়ে গেলেন যে, মেডিটেশন নিয়ে তিনি রীতিমতো গবেষণা শুরু করলেন এবং মেডিটেটরদের সাথে তার সখ্যতা তৈরি হলো।

তিনি ব্যাপক গবেষণা করলেন এবং গবেষণা করার পর- তিনি যেহেতু নিউরোলজিস্ট, ব্রেন সম্পর্কিত তার তো নলেজ একদম ক্লিয়ার।

মেডিটেশন হচ্ছে, ব্রেনের ব্যায়াম!

তিনি ব্যাপক গবেষণা করে যে নলেজ গ্যাদার করলেন, এটা নিয়ে তিনি একটা বই লিখেছেন।

এই সময়ের এটি ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলার। তার - No nonsense meditation book.

এবং তিনি মেডিটেশনকে আখ্যায়িত করলেন, মেডিটেশন নাথিং এলস, এটি হচ্ছে মস্তিষ্কের ব্যায়াম।

আপনি যখন চোখ বন্ধ করে কোনোকিছু কল্পনা করছেন, you are doing nothing, তা নয়।

You are doing something.

বরং আপনি জেগে থাকা অবস্থায় আপনার ব্রেনকে যতটা কাজে লাগাচ্ছিলেন, মেডিটেটিভ লেভেলে আপনার ব্রেনকে তার থেকেও বেশি কাজ করাচ্ছিলেন আপনি।

এবং ডক্টর লরিস, তিনি এইভাবে ব্যাখ্যা করছেন তার No nonsense meditation book, যে একজন ব্যক্তি যখন রেগুলার দৌড়ান, তখন তার কিছু পরিবর্তন হয়।

কোথায়? পায়ের পেশীতে। তার কাফ মাসল শক্তিশালী হয়, থাই এর মাসল শক্তিশালী হয়।

একজন ব্যক্তি যখন রেগুলার সাঁতার কাটেন, তখন তার কাঁধের পেশী শক্তিশালী হয়, তার বাইসেপস শক্তিশালী হয়।

তেমনই, তিনি বলছেন, একজন মানুষ যখন রেগুলার মেডিটেশন করবে, তখন তার মস্তিষ্কের কিছু অংশ শক্তিশালী হবে, ভলিউম বেড়ে যাবে, এবং তার থিকনেস বেড়ে যাবে।

একটু আগে আমরা বলছিলাম, cingulate cortex, prefrontal cortex, amygdala, hippocampus - এই অংশগুলো, এই যে রঙ্গিন এই অংশগুলোর গ্রেম্যাটারের থিকনেস বেড়ে যায়, ভলিউম বেড়ে যায় এবং এই অংশগুলো দারুণভাবে কাজ করতে শুরু করে।

এবং এই অংশগুলো আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে।

স্ত্রী চলে যাওয়ার দুঃখ দূর করলো মেডিটেশন!

তার সমস্যাটা কী হয়েছিল?

তিনি ভেঙে পড়েছিলেন। নেতিবাচক আবেগ তাকে গ্রাস করেছিল। হতাশায় তিনি নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিলেন।

তিনি যখন দীর্ঘদিন মেডিটেশন করতে শুরু করলেন, সেখানে রিকভারি শুরু হয়ে গেল।

নেতিবাচক আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী যে নেতিবাচক ক্যামিকেলস, নিউরোট্রান্সমিটারগুলো রিলিজ কমতে শুরু হলো - উল্টোদিকে তার যে হ্যাপি কেমিকেলগুলো রিলিজ বাড়তে শুরু করল - ডোপামিন, সেরেটনিন, অক্সিটসিন, এন্ডরফিন।

এবং যখন এই কেমিক্যালগুলোর নিঃসরণ বাড়তে শুরু করল, তার ভেতরে একটা আনন্দ অনুরণন তৈরি হয়ে গেল।

কিছুদিন পর তিনি ফিল করলেন স্ত্রী চলে যাওয়ার পরেও তার দুঃখ সেভাবে তাকে টাচ করছে না।

This is meditation.

হয়তো স্ত্রীর সাথে গত তিন মাস ধরে তার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে!

একজন ব্যক্তি, ধরেন ছোট্ট একটা এক্সাম্পেল। তার উচ্চরক্তচাপ। একজন চিকিৎসকের কাছে তিনি গেলেন।

তিনি কিছু টেস্ট করালেন। কোলেস্টেরল কত? ব্লাড সুগার কত? তার হার্টে কোনো সমস্যা আছে কিনা। সবকিছু করলেন।

দিয়ে বললেন, হ্যাঁ আপনার কোলেস্টেরল একটু বেশি আছে, এবং প্রেশার তো অনেক বেশি। এই এই ওষুধগুলো খান।

ঐরকম কোলেস্টেরল পৃথিবীর নাইনটি পার্সেন্ট মানুষের বেশি আছে।

কিন্তু তিনি জিজ্ঞেস করলেন না, যে, আপনার অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা। আপনার ঘুম হয়? স্ত্রীর সাথে কেমন সম্পর্ক? অফিসে কোনো ঝামেলা আছে?

হয়তো স্ত্রীর সাথে তার গত তিন মাস ধরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। এবং এই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে কখনো স্ত্রী জেতে- কখনো তিনি জেতেন। মাঝে মাঝে যুদ্ধ বিরতি হয়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হয় না।

এবং এটার ফল পড়েছে অফিসে। তার পারফরম্যান্স খারাপ হচ্ছে। প্রতিদিন সে বসের বকা খাচ্ছে। বসের বকা খেয়ে তার মেজাজ আরও যখন চড়ে যায়, বাড়িতে এসে তার স্ত্রীর সাথে যুদ্ধ আরও বাড়ায় দেয়।

একটা পর্যায়ে তার ঘুমের ডিস্টার্ব হওয়া শুরু হলো, এবং একটা পর্যায়ে তার প্রেশার ধরা পড়ল।

এই প্রেশার কি আপনি ওষুধ দিয়ে কমাতে পারবেন? নেভার।

সুস্থতার জন্যে আধুনিক চিকিৎসার পরিপূরক মেডিটেশন!

সেইজন্যে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, কারণ খুঁজতে হবে।

এই ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ হচ্ছে, দাম্পত্য কলহ। এবং এ দাম্পত্য কলহ থেকে বেরিয়ে আসার পথ তাকে করে দিতে হবে।

এবং এই বিষয়ে বলা যেতে পারে, যিনি গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের কার্ডিওলজিস্ট, ডক্টর হার্বার্ট বেনসন।

সেই ৭০ এর দশক থেকে তিনি মেডিটেটরদের নিয়ে গবেষণা করছেন, এবং গবেষণা করতে যেয়ে তিনি এত মজা পেলেন, তিনিও মিস্টার লরিসের মতো গবেষণা করতে করতে শেষ পর্যন্ত কার্ডিওলজি বাদ দিলেন।

তিনি এখন হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের একটা নতুন ডিপার্টমেন্ট, মাইন্ড বডি মেডিকেল ইন্সটিটিউটের প্রফেসর এবং বেনসন হেনরি ইন্সটিটিউট অব মাইন্ড বডি মেডিসিনের ডাইরেক্টর।

এবং তার একটা চমৎকার বেস্ট সেলার বই আছে - The Relaxation Response.

এবং শুধু আমেরিকাই নয়। আমরা যদি বাংলাদেশেও দেখি। বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ যে কজন চিকিৎসাবিজ্ঞানী আছেন, এক বাক্যে- তারা বলে গেছেন, এখনো বলছেন যে, সুস্থতার জন্যে আধুনিক চিকিৎসার পরিপূরক হতে পারে মেডিটেশন। এবং তাদের মধ্যে অগ্রণী হচ্ছেন জাতীয় অধ্যাপক ডাক্তার নুরুল ইসলাম প্রয়াত স্যার।

এটা অনেক আগে ১৯৯৫ সালে তিনি বলেছিলেন যে, আধুনিক চিকিৎসার সাথে মেডিটেশনকে যোগ করলে একজন ব্যক্তির সুস্থতা অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

এবং জাতীয় অধ্যাপক ডাক্তার এম আর খান, মেডিটেশন কোর্সে অংশ নিয়ে তিনিও একদম উদাত্ত কন্ঠে বলেছেন, যে মেডিটেশন প্রত্যেকটা মানুষের করা উচিৎ কারণ ৭০ শতাংশ রোগের মূল কারণ হচ্ছে, মনোদৈহিক।

এবং জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার ডাক্তার আব্দুল মালিক স্যার, তিনিও চারদিনের মেডিটেশন প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন, এবং তিনিও নির্দ্বিধায় বলেছেন যে, সুস্থতার জন্যে প্রত্যেকের মেডিটেশন করা উচিৎ।

শুনেছেন, বাঘ হার্ট এট্যাক করে মারা গেছে?

তো আমরা পুরো প্রোগ্রামকে সাম আপ করে ফেলি।

পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্যে তাহলে আমাদের করণীয় কী?

ভেরি সিম্পল। আপনার যেহেতু দেহ আছে, দৈহিক সুস্থতার জন্যে আপনাকে বিজ্ঞানসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। This is very important.

বাঘ প্রত্যেকদিন মাংস খায়। কোনোদিন শুনেছেন, বাঘ স্ট্রোক করেছে? অমুক বাঘ হার্ট এট্যাক করে মারা গেছে। প্যারালাইসিস হয়ে গেছে?

শোনেন নাই।

কেন? তার ডিএনএ, তার সিস্টেম এমনভবে তৈরি করা হয়েছে যে, মাংস খেলেও তার কিচ্ছু হবে না। বরং মাংসতে তার পরিপূর্ণ পুষ্টি।

পক্ষান্তরে গরু প্রতিদিন ভুসি, খড়, ঘাস খায়। এইটুকু খেয়েই তার সমস্ত পুষ্টি সে পেয়ে যাচ্ছে।

গরুকে আপনি মাংস খাওয়াতে পারবেন না। বাঘকে আপনি সবজি খাওয়াতে পারবেন না।

মানুষকে জানতে হবে সে কী খাবে এবং কী খাবে না...

এবং মিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেন হচ্ছে যে, মানুষের খাদ্যাভ্যাস।

প্রত্যেকটা মানুষকে জানতে হবে, সে কী খাবে, কতটুকু খাবে, কেন খাবে, এবং সে কী খাবে না এবং কেন খাবে না।

এবং দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে যে, এমন কোনো ইন্সটিটিউট নাই, এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নাই যেখানে মানুষকে এটা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

ফলে কোটি কোটি টাকা প্রত্যেক বছরে আমরা ব্যবহার করছি। কার পেছনে? রোগের পেছনে।

কিন্তু এই এডুকেশনের পেছনে ব্যয় করলে আমরা অসুস্থ হতাম না।

তো আপনাকে বিজ্ঞানসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, প্রতিদিন এক ঘন্টা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে, তিন দফা প্রাণায়াম বা দম চর্চা এবং কাঙ্ক্ষিত ওজন ঠিক করতে হবে। এই চারটা জিনিস যদি আপনি অনুসরণ করেন, আমরা এইটুকু বলতে পারি আপনি অনেক ভালো থাকবেন।

গেল দৈহিক।

নিয়মিত মেডিটেশন দূর করে মনের আবর্জনা!

এরপরে চলে আসি, মনের সুস্থতার জন্যে কী করবেন?

ভেরি সিম্পল! যে আবর্জনাগুলো আছে বের করে ফেলতে হবে।

অর্থাৎ রাগ, ক্রোধ, ক্ষোভ,দুঃখ, ঘৃণা, অনুতাপ, কুচিন্তা, দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, হতাশা - এগুলোকে দূর করে ফেলতে হবে।

এবং এগুলো দূর করার জন্যে একমাত্র পথ হচ্ছে মেডিটেশন।

একটি নিউজ দেখাই আপনাকে। ‘নিউজউইক’ খুব বিখ্যাত একটা আমেরিকান পত্রিকা, সেই পত্রিকার একটা আর্টিকেল হচ্ছে, Forgiveness and Health.

Forgiveness মানে কী? ক্ষমা। ক্ষমার উল্টা কী? ক্ষোভ।

অর্থাৎ একজন ব্যক্তি যদি ক্ষোভ পুষে রাখে, তিনি অসুস্থ হবেন। এবং তিনি যখন ক্ষমা করে দেবেন তখন আরেকটি জিনিস তার শরীরে চলে আসবে সেটি হচ্ছে সুস্থতা।

তার মানে শুধু ধর্মীয় বিষয় নয়। এটি এখন বিজ্ঞানের বিষয়, সুস্থতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা কম্পোনেন্ট।

এবং এই যে আমরা বারবার মেডিটেশনের কথা বলছি, এই মেডিটেশনকে এখন বলা হচ্ছে - this is alternative medicine.

এবং টাইম ম্যাগাজিন- অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি প্রভাবশালী পত্রিকা। সেই টাইম ম্যাগাজিন লিড নিউজ করে - The new age of alternate medicine.

রেগুলার কেউ যখন মেডিটেশন করবে, তখন ধীরে ধীরে তার মনের এই আবর্জনাগুলো চলে যেতে শুরু করবে।

নিজ ধর্মের অনুশাসন যিনি মেনে চলবেন তিনিই বহু অংশে সুস্থ থাকবেন!

আর আত্মার অসুস্থতার জন্যে কী করবেন তিনি?

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। কারণ আত্মার সাথে ধর্মের সম্পর্ক। আত্মার সাথে বস্তুর সম্পর্ক না।

কারণ প্রত্যেকটা ধর্মই বলে যে, প্রত্যেকটা ধর্মের মানুষ যদি তার নিজ ধর্মের ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে, তিনি বহু অংশে সুস্থ থাকবেন।

দুই, গীবত পরচর্চা পরকীয়া বন্ধ করতে হবে।

এখনকার একটা মহামারী হচ্ছে পরকীয়া। এই পরকীয়াকে বন্ধ করতে হবে।

কেউ যদি পরকীয়া করে, আমরা জোর দিয়ে বলছি, আপনার অসুস্থতা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। Definitely you will be sick.

আর নিয়মিত প্রার্থনা এবং প্রতিদিন অন্যের কল্যাণে কিছু না কিছু করার চেষ্টা করা।

এবং আবারও বলছি, টাইম ম্যাগাজিন একটি লিড নিউজ করে, Faith and Healing Can spirituality promote health? Doctors are finding some surprising evidence.

বিশ্বাসকে মনে করা হতো, এটা তো হুজুরদের বিষয়। পুরোহিতদের বিষয়।

এখন টাইম ম্যাগাজিন বলছে, এই বিশ্বাসের সাথে সুস্থতার সম্পর্ক আছে।

এবং আমেরিকাতে আমার এক ভাইস্তা, সে আমেরিকাতে ছিল কিছুদিন এমবিএ করার সময়।

এবং সে বলছিল যে, কেউ অসুস্থ হলে খবর চলে যেত এবং কাছাকাছি চার্চ থেকে এসে ফাদাররা তার জন্যে প্রার্থনা করত। এখনো রেগুলারলি এটা করা হয়।

এবং আমেরিকার মেডিকেল কলেজগুলোতে স্টুডেন্টকে শেখানো হয় - how to pray?

কী করে রোগীদের জন্যে প্রার্থনা করতে হবে।

এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে।

অনেক কিছুর সাথে শেষে আছে যে, মনের প্রভাব শরীরের ওপর পড়ে। কাজেই আমাদের যতদূর সম্ভব দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করা উচিৎ। আর এই জন্যে নিয়মিত নামাজ, প্রার্থনা, মেডিটেশন, শিথিলায়ন করা উচিৎ।

তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ই সুস্থতার আসল রহস্য!

অথবা আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, যে আপনি যদি এই তিনটি কম্পোনেন্টকে মাথায় রেখে আপনার জীবন পরিচালিত করেন, এবং একটু একটু করে এই পুরো বিষয়টা আপনার জীবনে বাস্তবায়ন করেন, আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি, ডব্লিউএইচও-র ডেফিনিশন, আপনার ভেতরে আপনার শরীরে এসে ধরা দিবে। আপনার জীবনে এসে ধরা দিবে।

এবং ডব্লিওএইচও-র ডেফিনিশনের সুস্বাস্থ্য আপনি অর্জন করবেন ইনশাল্লাহ।

দেখুন আরো ভিডিও

image

ভূঁড়ি থেকে মুড়ি - সর্বরোগের গুড়ি

১৩ জুন ২০২২

image

দীর্ঘজীবনের রহস্য জানুন, দীর্ঘদিন বাঁচুন - ডা. মনিরুজ্জামান

৪ অক্টোবর ২০২১

image

হার্ট অ্যাটাক : জানা-অজানা ৫টি কারণ

২ অক্টোবর ২০২১

image

হার্টে নয়, সমস্যা ছিল আমার মনে!—বাবু সুকুমার চক্রবর্তী

২ অক্টোবর ২০২১

image

আমার মধ্যে আত্মপ্রত্যয় জেগেছে, আমাকে বাঁচতে হবে- ডা. এ. কে আজিজ হাসান, ৩২৬ ব্যাচ

২ জানুয়ারি ২০২১

image

সিড়িঁ বেয়ে ওপরে উঠতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না - আহমেদ বকুল, ৩২৬ ব্যাচ

১৪ নভেম্বর ২০২০

image

কোর্স করে আমার অস্থিরতা কেটেছে- মো. মিজানুর রহমান, ৩২৯ ব্যাচ

১৫ অক্টোবর ২০২০

image

আমার দুটো ১০০ পার্সেন্ট, দুটো ৯০ পার্সেন্ট, দুটো ৮০ পার্সেন্ট ব্লক ছিল—ইঞ্জি. মো. শাহ্ আলম তালুকদার, সাবেক হৃদরোগী

৩০ আগস্ট ২০২০